আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনেও পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। এরই মধ্যে দুইজন উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। তাদের সঙ্গে একইসঙ্গে পদত্যাগ করেন এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য ও প্রক্টরাও। তারা সবাই রাষ্ট্রপতি তথা চ্যান্সেলর বরাবরে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন। আরও কয়েকজন উপাচার্য আগামী দু’একদিনের মধ্যে পদত্যাগ করতে পারেন বলে জানা গেছে।
বিশেষ করে বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, গুলি খেয়েছেন।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাত ৯টার পর পদত্যাগপত্র জমা দেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূইয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলক কুমার পাল এবং প্রক্টর ড. হারুন অর অর রশিদ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। উপাচার্য কার্যালয় এবং শেকৃবি রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শেকৃবি রেজিস্ট্রার বলেন, উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগপত্র পেয়েছি। পাশাপাশি উপ-উপাচার্য ড. অলক কুমার পাল এবং প্রক্টর ড. হারুন অর রশিদও পদত্যাগ করেন।
সমকালের শেকৃবি প্রতিনিধি জানান, অধ্যাপক শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া গত ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। আর উপ-উপাচার্য হিসেবে ড. অলক কুমার পাল নিয়োগ পান ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল৷
অধ্যাপক শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া উপাচার্য হবার আগে এক মেয়াদে চার বছর উপ–উপাচার্যও ছিলেন।
পদত্যাগ করেছেন টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেনসহ ছয় জন। তারা গত সোমবার (৫ জুলাই) রাতে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে ক্যাম্পাস ছাড়েন। তবে ভিসির পদত্যাগপত্রটি এখনও রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছায়নি।
নিজ হাতে লেখা পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষাপটে আমি পদত্যাগ করছি।’
একইসঙ্গে পদত্যাগ করে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মুছা মিয়া, বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. নুরুল ইসলাম, জাহানারা ইমাম হলের প্রভোস্ট ড. মোসা. নার্গিস আক্তার, শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. ইদ্রিস আলী ও শিক্ষার্থী কল্যাণ পরামর্শ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. ফয়জুন নাহার মিম।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগের পর বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ ছয় জনকে সোমবার রাত ১০টার মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়ার আল্টিমেটাম দেন। সেইসঙ্গে তাদের ঘেরাও করেন। তোপের মুখে পড়ে রাত ১১টার দিকে ভিসি বাদে বাকি পাঁচজন হাতে লেখা পদত্যাগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার কাছে রেখে চলে যান। ভিসি নিজের পদত্যাগপত্র সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।’
এদিকে, পদত্যাগের দাবি উঠেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন এবং ট্রেজারার অধ্যাপক আমিনা পারভীনের। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আজ ৮ আগস্ট বিকেল ৫টার মধ্যে তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
অন্যদিকে, ভিসির পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ছাত্রদলের নেতারা। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ডাক্তার তৌহিদুর আউয়ালের নেতৃত্বে এই মিছিল হয়। ডাক্তার তৌহিদুর রহমান আওয়াল বলেন, ‘এই বিএসএমইউ হাসপাতালের ভেতর থেকেই ডাক্তারলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ শাহবাগে শিক্ষার্থীর ওপরে গুলি চালায়। পিজির বিভিন্ন ছাদের ওপর থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কয়েক হাজার ছাত্র-জনতাকে আহত করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই হাসপাতালে ব্যবহার করে গণহত্যার চালিয়েছে আওয়ামী স্বৈরাচারী ক্যাডারেরা। আমরা গণহত্যার সহযোগী ভিসির পদত্যাগ ও বিচার চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে মোট ৬১টি। এর মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম চালু আছে ৫৫টিতে, বাকিগুলো নতুন। এই ৫৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন (অধিভুক্ত কলেজগুলোসহ) সাড়ে চার লাখ শিক্ষার্থী। দেশের উচ্চশিক্ষা স্তরে এ মুহুর্তে মোট ৪৭ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২২ শ’র বেশি কলেজে অন্তত ৩৬ লাখ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থী রয়েছে আরও লক্ষাধিক। দেশের সব মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল শিক্ষায় রয়েছেন অন্তত ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী।