তিস্তার বিষয়ে জানতে দিল্লিকে চিঠি ঢাকার

0
98
দিল্লিকে কূটনৈতিক চিঠি বা নোট ভারবাল পাঠিয়েছে ঢাকা।

তিস্তা থেকে পানি প্রত্যাহারে পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে দুটি খাল খনন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে দিল্লিকে কূটনৈতিক চিঠি বা নোট ভারবাল পাঠিয়েছে ঢাকা। এ ছাড়া সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। গতকাল রোববার এসব তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিস্তা বিষয়ে চিঠি পাঠানো নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, চিঠি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে লিখবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা নোট ভারবালের মাধ্যমে তথ্য জানতে চেয়েছি।

তিনি বলেন, নোটে হালনাগাদ তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। পানির প্রবাহ কমে গেছে। বাংলাদেশ যে তথ্যগুলো পেয়েছে, তা ভারতের সঙ্গে বিনিময় করেছে। এটা হয়তো তাদের অনেক দিন আগের পরিকল্পনা। এখন হয়তো জমি অধিগ্রহণ করছে। এখনই যে খাল কেটে ফেলেছে– এমন কিছু নয়। পানি প্রবাহ কমে গেছে এগুলো হওয়ার আগেই।

ভাটির দেশকে না জানিয়ে ভারতের এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এটি বেশ পুরোনো বিষয়। এ জন্য জানতে চাওয়া হয়েছে। সেখানে এখনও কিছু হয়নি। হওয়ার আগে উদ্বেগ প্রকাশ করারও কিছু নেই।

সম্প্রতি ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ প্রায় এক হাজার একর জমির মালিকানা পেয়েছে। এ জমির মাধ্যমে তিস্তার পূর্ব তীরে দুটি খাল খনন করবে প্রশাসন।

মিয়ানমারের উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা: গত ৫ দিন ধরে কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করছে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল। এ কয়দিনে প্রায় সাড়ে ৪০০ রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাই করেছে বাংলাদেশ সফররত প্রতিনিধি দলটি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে কিনা– এর উত্তরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান বাংলাদেশ প্রত্যাবাসনের মধ্যেই দেখছে। এর বাইরে একত্রীকরণ এবং তৃতীয় দেশে স্থানান্তরে সমাধান দেখছে না ঢাকা।

চীনের সহযোগিতায় ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চেষ্টার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য আমরা একটি পাইলট প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। যদি এটিতে সফল হই, তবে বড় সংখ্যায় রোহিঙ্গাদের আমরা পাঠাতে পারব। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল ১১০০-১২০০ রোহিঙ্গার যাচাই নিশ্চিতের একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এ যাচাই শেষ হলে প্রত্যাবাসনের বাকি ধাপগুলো পরীক্ষা করা হবে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এসেছে বলে কালকেই রোহিঙ্গারা রওনা করবে বা পরশু দিন ওদের ঠেলে পাঠিয়ে দেব– ব্যাপারটা সে রকম না। ১১ লাখ তো এক দিনে বা এক বছরে ফিরে যেতে পারবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রোহিঙ্গারা যেখানে ফেরত যাবে– রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ রয়েছে কিনা; সেখানকার পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা। তখনই তাদের প্রত্যাবাসনের প্রশ্নটি আসবে। আর যেখানে রোহিঙ্গাদের রাখা হবে, সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থাকবে কিনা– এটিও গুরুত্বপূর্ণ।

হিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার আশাবাদী কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের দিক থেকে একটা ইতিবাচক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা আগে কিন্তু করেনি। তবে এটা কি সাময়িক বা এর মধ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা– সেটা আমাদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী শীতের শুরুর দিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর ইঙ্গিত দেন তিনি।

রাখাইনে এখনও পরিবেশ তৈরি হয়নি: গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, সম্ভাব্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দ্বিপক্ষীয় পাইলট প্রকল্পের আওতায় মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। ইউএনএইচসিআর এ আলোচনাগুলোতে কোনোভাবেই জড়িত নয়।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে– এ নিয়ে ইউএনএইচসিআরের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে রাখাইনে এখনও সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়নি। শরণার্থীরা তাদের ইচ্ছাতেই নিজ দেশে ফেরত যাবে। কিন্তু কোনো শরণার্থীকে এ বিষয়ে জোর করা যাবে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করে যাবে। সেই সঙ্গে রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতেও সহায়তা করবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.