দীর্ঘদিন ধরে সংকটে থাকা পাকিস্তানের অর্থনীতি নিয়ে শেষ পর্যন্ত কিছুটা ভালো সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ঋণ চুক্তি হওয়ার পর দেশটির মুদ্রা রুপির দর কিছুটা বেড়েছে।
ঈদুল আজহা ও ব্যাংক হলিডের পর গতকাল মঙ্গলবার ডলারের দর দাঁড়ায় ২৭৩ রুপি; আজ বুধবার তা কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৫ রুপি, যদিও গত ২৭ জুন প্রতি ডলারের দর ছিল ২৮৫ রুপি। অর্থাৎ এক সপ্তাহে রুপির মান বেশ খানিকটা বেড়েছে। পিটিআইয়ের সূত্রে এই খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইএমএফের সঙ্গে পাকিস্তানের স্ট্যান্ড-বাই চুক্তির কারণে দেশটির বাজারে ডলারের দর কমতে শুরু করেছে। এখন মুদ্রার দর স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাই মুখ্য বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
দ্য ডনের খবরে বলা হয়েছে, ডলারের বিনিময় হার কমার কারণে আমদানি ব্যয় কমবে। সে কারণে ডলারের এই দর বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তখন বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। সেই পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আসাও বাড়বে, কারণ, তখন হুন্ডিওয়ালারা ঝুঁকি নিতে চাইবেন না।
২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তনের সময় ডলারের দর ছিল ১৮৩ রুপি। সেই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ইসহাক দার পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী হওয়ার সময় ডলারের দর ছিল ২৩০ রুপি।
মুদ্রার এ দরপতনের কারণে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির সূচক রীতিমতো আকাশ ছুঁয়েছিল। জুনে দেশটির ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার ছিল ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ; চলতি বছর যা এই প্রথম ৩০ শতাংশের নিচে নেমেছে। এর আগে মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩৮ শতাংশ। আর এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ, মার্চে ছিল ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান সরকার মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে ও বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার টিকিয়ে রাখতে আমদানি সীমিত করেছে।
পাকিস্তানের বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাজনৈতিক সংকটের কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। মুদ্রা ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, পুরো এক বছর নিছক রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর করে চলে গেল। এতে অর্থনীতির কেবল ক্ষতিই হয়েছে, আর কিছু নয়।
পাকিস্তানের এই দুর্গতির পেছনে দেশটির সামরিক বাহিনীর দিকে বরাবরই আঙুল তোলেন বিশ্লেষকেরা। স্বাধীনতার পর বেশির ভাগ সময় সামরিক শাসনের অধীন ছিল দেশটি। বিভিন্ন বড় শক্তির দাবার ঘুঁটি হিসেবে কাজ করেছে সেনাবাহিনী।
সামরিক ব্যয় বাড়াতে বাড়াতে আজ এ দুর্যোগের মুখে পড়েছে পাকিস্তান। মেক্সিকোকে খেয়েছে তাদের ড্রাগ কার্টেল, ইতালিকে মাফিয়া, আর পাকিস্তানকে মিলিটারি—এমন কথা বিশ্লেষকেরা বলে থাকেন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন তিন বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।