পাকিস্তানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাজারে। দেশটির খুচরা বিক্রেতাদের তথ্যানুসারে, গত বছরের তুলনায় এবারের ঈদুল ফিতরে কেনাকাটা অনেকটাই কমেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, দেশটিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, তাতে মানুষের কেনাকাটা কমে গেছে। ঈদুল ফিতরের সময় বছরের সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়। এতে দেশটির ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। খবর আল–জাজিরার।
চেইনস্টোর অ্যাসোসিয়েশন পাকিস্তানের (সিএপি) চেয়ারম্যান তারিক মেহবুব আল-জাজিরাকে বলেন, এবারের ঈদুল ফিতরে নারীদের পোশাক ছাড়া আর সব ধরনের পণ্যের বিক্রি ২০ শতাংশ কমেছে।
বিষয়টি হচ্ছে, গত মার্চ মাসে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতির সূচক ৩৫ শতাংশে উঠেছে। সেই সঙ্গে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে; আইএমএফের বেইল আউট প্যাকেজের জন্য ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হচ্ছে এবং উচ্চ শুল্ক আরোপ করতে হচ্ছে—এসব কারণে সামগ্রিকভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি; মার্চ মাসে তা ৪৭ শতাংশে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির সচ্ছল শ্রেণিও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হচ্ছে।পাকিস্তানের নারীদের পোশাক ব্র্যান্ড ক্রস স্টিচের কর্ণধার আসাদ শফি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে গত দুই বছরে পাকিস্তানিদের সম্পদ অর্ধেক কমেছে। অর্থাৎ আমরা এখন যাদের কাছে পণ্য বিক্রি করছি, তাদের সম্পদ অর্ধেক হাওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু এ সময় খরচ বেড়েছে শতভাগ।’
আসাদ শফি আরও বলেন, এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের আশাও কমে গেছে; এখন মোটামুটি খরচ তুলতে পারলেই হয়। এদিকে এ বাস্তবতার মধ্যেও রকমফের আছে। সিএপির সহপ্রতিষ্ঠাতা আসফান্দিয়ার ফররুখ আল–জাজিরাকে বলেন, প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রিবাট্টা অতটা কমেনি, কারণ সমাজের উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণি সেখান থেকে কেনাকাটা করে। তবে স্থানীয় বাজারে বেচাকেনা কমেছে।
পাকিস্তানের লাহোর শহরের মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্তদের আকর্ষণ হচ্ছে আনারকলি ও লিবার্টি মার্কেট। উভয় মার্কেটের বিক্রেতারা বলেছেন, এবারের ঈদে বেচাকেনা অর্ধেক কমেছে।
পাকিস্তান সরকারের পূর্বাভাস, চলতি অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে ২ শতাংশ; যদিও সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করে ২ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৬৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু আইএমএফের ঋণ পেতে বেশ কিছু শর্ত আগে মানতে হয়। সেসব শর্ত মানতে আরও দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে পাকিস্তান। ঋণও পাচ্ছে না তারা।
আইএমএফের সঙ্গে কর্মী পর্যায়ের ঐকমত্য না হওয়া প্রসঙ্গে পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আইএমএফ জনসমক্ষে বলছে গরিববান্ধব নীতি করতে; কিন্তু আদতে তারা যা বলছে, তাতে গরিব মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে যাবে।
আইএমএফ এখন চাইছে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া অন্য যেসব বিষয়ে তাদের অগ্রাধিকার পরিবর্তন হয়েছে, সেগুলো হলো মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারিত না রাখা, যাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত আফগানিস্তানে অর্থ পাচার না হয়, বন্ধুরাষ্ট্রগুলো পাকিস্তানকে সহায়তা করবে—এ মর্মে লিখিত নিশ্চয়তা ও প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারে ৩ দশমিক ৩৯ রুপি সারচার্জের বিধান অব্যাহত রাখা।