পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের পর ড্রোনশিল্পে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারত

0
26
ড্রোন

ভারত সামরিক–বেসরকারি ড্রোন নির্মাতাদের জন্য ২৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের (২ হাজার কোটি রুপি) ইনসেনটিভ (উৎসাহ ভাতা) কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে। ড্রোনের ওপর ভারতের আমদানিনির্ভরতা কমাতে এবং চীন ও তুরস্ক-সমর্থিত পাকিস্তানের ড্রোন কর্মসূচির মোকাবিলায় এ কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্তত তিনটি সূত্র জানিয়েছে।

ভারতের এই দেশীয় ড্রোন তৈরির উদ্যোগের পেছনে রয়েছে গত মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের সংঘাত। ওই সংঘাতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী দুই দেশই প্রথমবারের মতো একে অন্যের বিরুদ্ধে হামলায় ব্যাপকভাবে ড্রোন ব্যবহার করেছে। বর্তমানে পারমাণবিক শক্তিধর এই প্রতিবেশী দুই দেশ ড্রোন প্রযুক্তি তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

সরকারি দুই কর্মকর্তা এবং শিল্পসংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেন, দুই হাজার কোটি রুপির এ কর্মসূচির আওতায় আগামী তিন বছরে ড্রোন, যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার, প্রতিরক্ষা-ড্রোন ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সেবা খাতে ইনসেনটিভ দেওয়া হবে।

আগে কখনো এ কর্মসূচির বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি। ২০২১ সালে চালু হওয়া ১২০ কোটি রুপির প্রোডাকশন-সংশ্লিষ্ট ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিমের চেয়ে এই বাজেট অনেক বেশি। পিএলআই মূলত ড্রোন উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য চালু হয়েছিল। তবে সেই উদ্যোগ পুঁজি সংগ্রহ ও গবেষণায় বিনিয়োগে সমস্যায় পড়েছিল।

এই ড্রোন কর্মসূচির নেতৃত্ব দেওয়া ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে ই-মেইলে পাঠানো রয়টার্সের প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি।

এর আগে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভারত স্থানীয় ড্রোনশিল্পে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। এ খাতে আগামী ১২ থেকে ২৪ মাসে ৪৭ কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে পারে। সরকার ও সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, ধাপে ধাপে এই ব্যয় হবে।

আগে ভারত সামরিক ড্রোন প্রধানত তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ ইসরায়েল থেকে আমদানি করত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের ড্রোনশিল্প প্রতিষ্ঠান সাশ্রয়ী মূল্যে সামরিক ড্রোন তৈরির ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি করেছে। তবু মোটর, সেন্সর ও ইমেজিং সিস্টেমের মতো কিছু উপাদানের ক্ষেত্রে এখনো চীনের ওপর নির্ভরতা রয়েছে।

ভারতের লক্ষ্য হলো, এই ইনসেনটিভের মাধ্যমে ২০২৮ অর্থবছরের (এপ্রিল-মার্চ) মধ্যে মূল ড্রোন যন্ত্রাংশের অন্তত ৪০ শতাংশ দেশেই তৈরি করা।

ভারতের প্রতিরক্ষাসচিব রাজেশ কুমার সিং গত সপ্তাহে বলেন, (ভারত-পাকিস্তান) সংঘাতের সময় দুই পক্ষই ব্যাপকভাবে ড্রোন, লোটারিং মিউনিশন ও কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করেছে।

রাজেশ আরও বলেন, ‘এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা হলো, দেশীয় প্রযুক্তির ওপর আরও বেশি জোর দিতে হবে, যাতে আমরা একটি বড় ও কার্যকর সামরিক ড্রোন উৎপাদন–ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।’

ভারত সরাসরি ড্রোন আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে যন্ত্রাংশের আমদানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা নেই। এ ছাড়া সরকার দেশীয়ভাবে যন্ত্রাংশ সংগ্রহকারী উৎপাদকদের জন্য বাড়তি উৎসাহ ভাতার পরিকল্পনা করছে।

ভারতের কর্মকর্তারা আরও বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসআইডিবিআই) এ কর্মসূচিতে অংশ নেবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজি, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে স্বল্প সুদে ঋণ দেবে।

বর্তমানে ভারতের ড্রোন খাতের সঙ্গে জড়িত নির্মাণ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছয় শতাধিক। উৎসাহ ভাতা পরিকল্পনার আলোচনায় যুক্ত শিল্পসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.