বড় ধরনের আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে পাকিস্তান। ডলারের সাপেক্ষে তলানিতে ঠেকেছে দেশটির মুদ্রা রুপির দর। এর মধ্যেই জানা গেল, আগামী তিন বছরে পাকিস্তানকে বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসের (ইউএসআইপি) সূত্রে ভারতের এনডিটিভি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে পাকিস্তানকে ৭৭.৫ বিলিয়ন ডলার বা পাকিস্তানি রুপিতে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে খুবই ঘনিষ্ঠ দুই দেশকে—চীন ও সৌদি আরব।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে পাকিস্তানকে রীতিমতো সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি, রাজনৈতিক সংঘাত ও ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের কারণে পাকিস্তান এমনিতেই জর্জরিত। এখন নতুন করে বড় অঙ্কের এ ঋণ পরিশোধ করতে হলে বিপদেই পড়বে দেশটি।
ইউএসআইপির প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী তিন বছরে ঋণে জর্জরিত দেশটিকে চীনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ঋণদাতা ও সৌদি আরবকে বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের জুনের পরিশোধযোগ্য ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৭.৫ বিলিয়ন ডলার। শুধু তা-ই নয়, ওই সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট অঙ্কের এই ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইউএসআইপি। পাকিস্তান যদিও আশাবাদী, চীন আবার ঋণ পরিশোধের সময় বাড়াবে।
তবে এ বিষয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পাকিস্তান ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়েছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার কথা ছিল তাদের। সেই ঋণ পেতে আইএমএফের সব শর্ত পূরণ করার যথাযথ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান সরকার।
কিন্তু আইএমএফ যেন কিছুতেই পাকিস্তানের কাছে ধরা দিচ্ছে না। তাদের নিত্যনতুন শর্তের বেড়াজালে এ ঋণ এখন পাকিস্তানের কাছে রীতিমতো সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।
পাকিস্তানের পত্রিকা দ্য ডনের এক সংবাদে বলা হয়েছে, আইএমএফ গরিববান্ধব নীতির কথা বললেও যেসব শর্তারোপ করছে, তাতে গরিব মানুষের দুঃখকষ্ট আরও বাড়বে।
পাকিস্তান ২০১৯ সালে আইএমএফের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যার মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হবে। যদিও পাকিস্তান এই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি কোনো পক্ষই।
এদিকে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মুর্তজা সায়্যিদ সম্প্রতি ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, কিছুদিন আগে পাকিস্তানের রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন ডলার বা ৩০০ কোটি ডলারে নেমে আসে। দেশটির বিদেশি ইতিহাসে মুদ্রার মজুত কখনো ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি। অথচ ভারতের রিজার্ভ ৬০০ বিলিয়ন এবং চীনের প্রায় ৪ লাখ কোটি ডলারের রিজার্ভ আছে। বাংলাদেশের রিজার্ভও প্রায় ৪০ বিলিয়নের কাছাকাছি গেছে।
মুর্তজা সায়্যিদ আরও বলেন, এদিকে ১৯৯০-এর দশক থেকে পাকিস্তান ১১ বার আইএমএফের ঋণসহায়তা নিয়েছে। বাংলাদেশ নিয়েছে তিনবার। এ সময়ে চীন ও ভারতকে একবারও হাত পাততে হয়নি। সব মিলিয়ে স্বাধীনতার পর পাকিস্তান ২১ বার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে।
সংকটগ্রস্ত পাকিস্তানের দুর্দশার যেন শেষ নেই। কিছুদিন পরপরই নতুন সংকটের কথা শোনা যায়। বিদেশি মুদ্রার অভাবে জ্বালানি কিনতে পারছে না দেশটি। ফলে লোডশেডিং এখনো তাদের নিত্যসঙ্গী।
আরব নিউজ পাকিস্তানের এক সংবাদে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী মুসাদিক মালিক জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টা দেশের সাধারণ মানুষকে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। চাহিদার তুলনায় জোগান কমে যাওয়ায় গ্যাসের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে পাকিস্তানজুড়ে।
মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, এখন থেকে ধনী ও গরিবদের গ্যাসের মূল্য আলাদা হবে। অর্থাৎ, গ্যাস কিনতে গেলে ধনীদের বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। শাহবাজ শরিফের জোট সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে বিক্রয়কেন্দ্র খুলেছে কানাডার নামি কফি ব্র্যান্ড টিম হর্টন। সেখানে কফির দাম ৩৫০ থেকে শুরু করে ৮০০ রুপি পর্যন্ত। অর্থনৈতিক এই দুর্যোগের মধ্যেও সেখানে এত দামে কফি পান করার মানুষের অভাব হচ্ছে না। উদ্বোধনের পর এই দোকানের সামনে মানুষের যে ভিড় ছিল, সেই ছবি দেশটির গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়েছে।