ইউএনএফসিসিসির ২০০৭ সালের বালি কর্মপরিকল্পনার ফলে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করলেও তা বিশ্ববাসীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। এ চুক্তি উচ্চমাত্রার নির্গমনকারী উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশনে অতীতে গৃহীত অনেক নীতিগত বিষয় এতে উপেক্ষা করা হয়েছে। তারপরও সারা দুনিয়ার হাজার হাজার নাগরিক প্রতি বছর কপে যোগদান করেন বিপুল আশায় বুক বেঁধে। তাঁরা ভাবেন, উচ্চমাত্রার নির্গমনকারীদের ছাড় দেওয়া, নির্গমনকারী ও ক্ষতিগ্রস্তদের এক পাল্লায় মাপা এবং নির্গমন কমানোর আইনগত বাধ্যবাধকতা ঐচ্ছিক করা সত্ত্বেও কিছু না কিছু অর্জন করা সম্ভব। দেশে দেশে বিভিন্ন খাতে অনেক ভালো উদ্যোগ হয়তো নেওয়া সম্ভব। সম্ভব খাতওয়ারি বাণিজ্য স্বার্থও বিকশিত করা।
কপে এমন অনেক কিছুই হয়, যা অফিসিয়াল সিদ্ধান্তের অংশ না হলেও পার্শ্ব আয়োজনের অর্জন হিসেবে পরিগণিত হয়। আবার কখনও কখনও বহুদলীয় উদ্যোগ হিসেবে কপ-সিদ্ধান্তের অংশ হয়।
শুক্রবার ছিল কপের ডিকার্বনাইজেশন দিবস। এ দিন বিশ্বনেতৃত্বের অতীত অঙ্গীকার অনুসরণ করে পাঁচটি বড় খাতে কার্বন নির্গমন কমানোর মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মহাপরিকল্পনার অংশীদার দেশ ও কোম্পানিগুলো এবং জাতিসংঘ একে ব্রেকথ্রো অ্যাজেন্ডা বা সাড়াজাগানো পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছে।
এ উদ্যোগের অধীনে মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের অর্ধেকের প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলো ১২ মাসের কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে সর্বত্র পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তিকে সস্তা ও সহজলভ্য করতে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। তারা একে অগ্রাধিকারমূলক প্রয়াস হিসেবে উপস্থাপন করছে। বিদ্যুৎ, সড়ক পরিবহন, স্টিল, হাইড্রোজেন ও কৃষিতে নির্গমন কমানো ত্বরান্বিত করতে এসব দেশ আগামী কপের আগে ২৫টি সহযোগিতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্বোধন করল এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে।
গত বছরের গ্লাসগো কপ, এবারের শার্ম আল-শেখ কপ ও সামনের বছরের সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য কপের প্রেসিডেন্সির সক্রিয় সহযোগিতায় সূচিত এ উদ্যোগ ব্যক্তি খাতের প্রতি একটি ইঙ্গিত। নির্গমনকারী ব্যক্তি খাতের শিল্প হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রতি সবচেয়ে সংরক্ষণমূলক প্রতিবন্ধকতা।
ঘোষিত কর্মসূচির মাধ্যমে মোট বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৫০ শতাংশের খাতকে টার্গেট করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ কমানো ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এ পরিকল্পনার অংশ বলে বলা হচ্ছে। আগামী বছর ভবন নির্মাণ ও সিমেন্ট খাতকেও এ উদ্যোগের অংশ করা হবে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগের সহায়তায় এই মহাপরিকল্পনার অংশীদার হয়েছে মরক্কো, মিসর, ভারত, ইউরোপীয় কমিশন, জি৭ ও অন্যান্য দেশ।
প্রথম সপ্তাহের অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা, পার্শ্বসভা ও উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে ১৪ নভেম্বর থেকে সূচিত দ্বিতীয় সপ্তাহের কার্যক্রমে নিবিড় আলোচনা হতে পারে। এটাই যে কোনো কপের স্বাভাবিক কার্যপদ্ধতি।
প্রতিটি কপের মতো এবারও প্রথম সপ্তাহের আলোচনার ওপর বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সিএসআরএলের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক মুক্তা, ইকুইটিবিডির আমিনুল হক, সিপিআরডির শামসুদ্দোহা, কানসার সঞ্জয় ভাসিস্ত, পিডিডির অ্যাটলে সোলবার্গ ও এসিডএসেরর রাবেয়া বেগম। আলোচনা গতিপ্রকৃতিতে তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন ও অবিলম্বে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত নির্গমন হ্রাস পরিকল্পনায় উচ্চতর হারে নির্গমন কমানোর অঙ্গীকার দাবি করেন।
জিয়াউল হক, মিশর থেকে