
বাংলাদেশে বসবাস করেই আন্তর্জাতিক পর্নো ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে থাকা এক যুগলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা জানায়, এই যুগল পর্নো ভিডিও তৈরির পাশাপাশি অন্যদেরও এ জগতে সম্পৃক্ত করেছেন।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সিআইডি সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে সিআইডির গণমাধ্যম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান গ্রেপ্তার দুজনের কার্যক্রমের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে জসীম উদ্দিন খান বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে আলোচিত পর্নো তারকা মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও বৃষ্টিকে (২৮) গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বান্দরবান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। আর বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানায়। তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ পর্নো ভিডিও তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অনুসারে মামলা হয়েছে।
২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে তাঁদের প্রথম ভিডিও প্রকাশিত হয় বলে জানান জসীম উদ্দিন খান। তিনি বলেন, গত এক বছরে এসব প্ল্যাটফর্মে তাঁদের ১১২টি ভিডিও প্রকাশিত হয়, যা ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাঁরা পর্নো তারকাদের আন্তর্জাতিক পারফর্ম্যান্স র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে উঠে আসেন। ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী তাঁদের অবস্থান অষ্টম।
নতুনদের যুক্ত করতে উৎসাহিত করা হতো উল্লেখ করে জসীম উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা একাধিক আন্তর্জাতিক পর্নো ওয়েবসাইটে ভিডিও আপলোড করতেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রাম, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেও পর্নোগ্রাফির প্রচারণা চালাতেন। এমনকি পর্নো ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যদের যুক্ত হতেও উৎসাহিত করতেন। টেলিগ্রাম চ্যানেলে নতুন সদস্য যুক্ত করলে নগদ অর্থ দেওয়া হবে, এই বিজ্ঞাপনও দিতেন।
এই যুগল বিলাসী জীবন যাপন করতেন জানিয়ে জসীম উদ্দিন খান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে না পারা এ যুগল দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এলেও অনলাইনে রয়েছে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার বহু ছবি। বিষয়টি সামাজিক ও নৈতিকভাবে উদ্বেগজনক।
এক প্রশ্নের জবাবে জসীম উদ্দিন বলেন, অনলাইন জগৎটা সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তবে ইতিমধ্যে প্রকাশিত ১১২টি পর্নো ভিডিও যাতে বাংলাদেশ থেকে কেউ দেখতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি এই কাজের মাধ্যমে তাঁরা কী পরিমাণ অর্থ আয় করেছেন, সেই অর্থ কোন মাধ্যমে দেশে এনেছেন, সেসব জানার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া নতুন করে যাঁদেরকে যুক্ত করেছেন, তাঁদের কত টাকা দিতেন, কীভাবে উদ্বুদ্ধ করতেন, সেটিও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে প্রথম আলোর বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, মুহাম্মদ আজিম বান্দরবান শহরের বালাঘাটা এলাকায় ফল ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে ১২ অক্টোবর মাসে ১০ হাজার টাকায় বহুতল ভবনে একটি বাসা ভাড়া নেন। ওই বাসার একজন তত্ত্বাবধায়ক নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, ওই যুগল নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেন। ভাড়া নেওয়ার পর থেকে তাঁরা বাসা থেকে খুব একটা বের হতেন না।