খরচ কম লাগায় এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় অনেকেই ভবন নির্মাণে ব্লক ইট ব্যবহার করছেন। জেলায় কমপক্ষে ২০ জন ব্লক ইট তৈরির কারখানা দিয়েছেন।
উৎপাদনে পোড়াতে হয় না কোনো ধরনের কাঠ বা কয়লা। ফলে দূষিত হয় না পরিবেশ। এগুলো তৈরিতে কৃষিজমির মাটিও ব্যবহৃত হয় না। আবার ভবন বা ঘর তৈরিতে ইটের চেয়ে খরচও কম হয়। শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ। তাই ইটের বিকল্প হিসেবে বাগেরহাটে বাড়ছে কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার। সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় ২০ জন উদ্যোক্তা নিজেদের কারখানায় প্রতি মাসে তৈরি করেন লক্ষাধিক ব্লক ইট। প্রশিক্ষিত এই উদ্যোক্তারা তাঁদের কারখানাতে বালু, সাদা (মোটা) বালু, ফ্লাই অ্যাশের সঙ্গে সিমেন্ট ও রাসায়নিক দিয়ে তৈরি করা হয় এই ব্লক। এসব কারখানায় ১২০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার মাদ্রাসা বাজার এলাকায় এই ব্লক দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী শাকিলা বেগম। ৬৫০ বর্গফুটের একতলা ভবন নির্মাণে তাঁর দেড় হাজারের মতো ব্লক লেগেছে জানিয়ে শাকিলা বলেন, মিস্ত্রি, প্লাস্টারসহ সব মিলিয়ে এই ভবন তৈরিতে ব্যয় হয়েছে চার লাখ টাকার মতো। স্থানীয় এক ব্লক কারিগরের পরামর্শে মূলত ব্লক দিয়ে বাড়ি করা। এতে খরচও যেমন তুলনামূলক কম হয়েছে, ঘরটি দেখতেও অনেক সুন্দর হয়েছে।
বাগেরহাট শহরতলির সোনাতলা এলাকায় আবু সাঈদ নামের এক ব্যক্তি গড়ে তুলেছেন ব্লক ইট তৈরির কারখানা। বর্তমানে তাঁর কারখানাটিতে ছয়জন শ্রমিক কর্মরত। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন একজন শ্রমিক ২০০-এর মতো ব্লক তৈরি করতে পারেন। দীর্ঘ ১১ বছর প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফিরে কিছু করার চেষ্টা করছিলাম। এরই মধ্যে এই ব্লক সম্পর্কে জানতে পারি। প্রশিক্ষণ নিয়ে কারখানা গড়ে তুলি। আগুন বা কোনো জ্বালানি না লাগায় উৎপাদন খরচও তুলনামূলক কম হয়। পরিবেশবান্ধব ও ইটের তুলনায় ওজন কম হওয়ায় অনেকেই এখন ব্লক ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছেন। ফলে চাহিদাও তৈরি হচ্ছে।’ তৈরি ও বিক্রির পাশাপাশি ক্রেতাদের ব্লক দিয়ে স্থাপনা নির্মাণে শ্রমিকসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন তিনি।
আরেক উদ্যোক্তা সদর উপজেলার তুষার পাল বলেন, ‘আমি ব্লক এবং পার্কিং টাইলস তৈরি করছি। ইটের বিকল্প হিসেবে শহরে-গ্রামে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। ফলে নতুন নতুন উদ্যোক্তারাও ঝুঁকছেন। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকেও আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছি। ২০২৫ সালের মধ্যে ইটের ভাটা বন্ধ করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাতে আমাদের এ কংক্রিট ব্লকের চাহিদা আরও অনেক বেড়ে যাবে।’ সরকারি স্থাপনা নির্মাণে দ্রুত পরিবেশবান্ধব এই ব্লকের ব্যবহার নিশ্চিতের দাবি তাঁর।
আবু সাঈদ ও তুষার পালের মতো বাগেরহাটের এমন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বেসরকারি সংস্থা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক)। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্টের আওতায় তাঁরা বাগেরহাট জেলায় ব্লক, পার্কিং টাইলস নির্মাণে দক্ষ শ্রমিক ও উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করছেন। এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছোট ও মাঝারি আকৃতির কারখানা স্থাপন করে উৎপাদনে গেছেন ২০ জন।
ব্লক ইট তৈরির কারখানার কয়েকজন মালিক বলেন, প্রতিটি ইটের দাম ১২ থেকে ১৫ টাকা। আর একটি ব্লকের দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। কিন্তু একটি ব্লক পাঁচটি ইটের সমান। পাঁচটি ইটের দাম পড়ে ৬০ থেকে ৭৫ টাকা। সে হিসাবে যেকোনো ভবনে ব্লক ব্যবহার হলে খরচ অনেকটাই কমে যায়। এ ব্যাপারে প্রচার বাড়ালে ইটের বিকল্প হিসেবে মানুষ ব্লককেই বেশি বেছে নেবেন। এতে একদিকে পরিবেশদূষণ কমবে, অন্যদিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে কৃষিজমি ও বনাঞ্চল।