জনি বেয়ারস্টোকে নিরীহ বাউন্সার করেছিলেন ক্যামেরন গ্রিন। ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান ‘ডাক’ করে বলটি ছেড়ে দেন। বল মাটিতে একবার বাউন্স খেয়ে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির গ্লাভসে জমা পড়ে।
ঘটনাটা এ পর্যন্ত থাকলে অর্থাৎ বেয়ারস্টো যদি তখন আউট না হতেন, তাহলে কাল অ্যাশেজে দ্বিতীয় টেস্টের শেষ দিনে ইংল্যান্ডের পক্ষে কি ফল আসত? সেটা অনেক যদি-কিন্তুর ওপর নির্ভর করলেও এটা সত্য বেয়ারস্টো ক্রিজে থাকলে ইংল্যান্ডের রান তাড়াটা আরেকটু সহজ হতো। কিন্তু ক্যারির উপস্থিত বুদ্ধি তা হতে দেয়নি।
বেয়ারস্টোকে ক্রিজ ছেড়ে বের হতে দেখেই ‘আন্ডারআর্ম’ থ্রোতে স্টাম্প ভেঙেছেন ক্যারি। ব্যস, স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে আউট বেয়ারস্টো। এই আউট নিয়ে কাল থেকেই বিতর্ক হচ্ছে। কেউ এই আউটের পক্ষে কেউ বিপক্ষে। তবে এই আউট কিন্তু অস্ট্রেলিয়া দলের পরিকল্পনার ফসল। সেটাই জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড।
ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় টেস্টেও হারিয়ে অ্যাশেজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। কাল ৪৩ রানে জয়ের পর বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে কথা বলেছেন ম্যাকডোনাল্ড। ওই আউটের আগে বেয়ারস্টোকে ক্রিজ ছেড়ে বের হতে দেখে বুদ্ধিটা মাথায় এসেছিল অস্ট্রেলিয়া দলের।
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও ক্যারি এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে সলা-পরামর্শ করেছিলেন।
সংবাদমাধ্যমকে এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কোচ বলেছেন, ‘একজন খেলোয়াড় যখন ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে যান, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তখন সুযোগটা নেওয়াই যায়। প্যাট ম্যাচের পর জানিয়েছে বেয়ারস্টোর ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে যাওয়া নিয়ে সে (মাঠে) কথা বলেছে আর সুযোগটা নেয় অ্যালেক্স ক্যারি, বল তখনো খেলার মধ্যে ছিল।’
অস্ট্রেলিয়ার এই কোচ মনে করেন আউটটি বৈধ, ‘সিদ্ধান্তটা তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে যাওয়ার পর তিনি আউট দিয়েছেন। এটা ক্রিকেটের আইনসিদ্ধ সিদ্ধান্তই ছিল। তাই সত্যি বলতে আমি এটা নিয়ে এত বিতর্কের কিছু দেখি না।’
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস এমন আউটকে ক্রিকেটের ‘চেতনার পরিপন্থী’ বলেছেন। তাঁর কথার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার ব্র্যাড হগ। তাঁর মতেও, বেয়ারস্টোর আউটটি খেলার চেতনার পরিপন্থী। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কোচ ম্যাকডোনাল্ড সোজাসাপটাই বলেছেন, এমন সুযোগ আবার পেলে তা কাজে লাগাতে দ্বিধা করবে না অস্ট্রেলিয়া দল, ‘সব খেলোয়াড়ই এটা মনে করে। বিষয়টি অনেকটাই এমন, যখন নাথান লায়নের বলে কেউ ডাউন দ্য উইকেট আসে, তখন সে (লায়ন) কি বল লেগ সাইডে করার সুযোগটা নেয়? এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তাই আমি মনে করি যেকোনো সময় একজন খেলোয়াড় ক্রিজ ছাড়লে সুযোগটা নেওয়া যায়…তবে এমন সব ঘটনায় দুটি পক্ষের মতামত আসবেই।’
বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল লর্ডসের লং রুমে। অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা মধ্যাহ্নবিরতিতে মাঠ ছেড়ে লং রুম দিয়ে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার সময় তাঁদের দুয়ো দিয়েছেন অনেকে। সে সময় ডেভিড ওয়ার্নার আর উসমান খাজার সঙ্গে বচসায় জড়ান এমসিসির কয়েকজন সদস্য। দুজনকে উদ্দেশ্য করে তাঁরা কটু মন্তব্য করেন। ওয়ার্নার সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় তাঁর সামনে চলে আসেন এক সদস্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, এমসিসির দুই সদস্যকে দেখিয়ে খাজা নিরাপত্তাকর্মীদের বলছেন, ‘একে এবং একে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টাইমসকে একটি সূত্র জানিয়েছে, এমসিসির একজন সদস্য ওয়ার্নারের সঙ্গে শারীরিক সংঘর্ষেও গিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামও বেয়ারস্টোর আউট মেনে নিতে পারেননি। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না, ওদের সঙ্গে আমরা শিগগিরই বিয়ার খেতে বসব।’ ইংল্যান্ড কোচের এই মন্তব্য শুনে অস্ট্রেলিয়ার কোচ ম্যাকডোনাল্ডের প্রতিক্রিয়া, ‘তার (ম্যাককালাম) সঙ্গে এখনো কথা হয়নি। মন্তব্যটা এই প্রথম শুনলাম। তবে তার কথায় হতাশ হয়েছি।’
ক্রিকেটের আইন প্রণেতা সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) ২০.১.২ ধারায় বলেছে, ‘বল তখনই ডেড বলে গণ্য হবে যখন বোলারের প্রান্তের আম্পায়ার নিশ্চিত হবেন ফিল্ডিংয়ে নামা দল এবং উইকেটের ব্যাটসম্যানরা সেটিকে আর খেলার অংশ বলে মনে করছেন না।’
ইংল্যান্ডের সাবেক দুই টেস্ট অধিনায়ক এউইন মরগান ও অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস মনে করেন, আম্পায়ার বেয়ারস্টোকে আউট ঘোষণা করে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। স্কাই স্পোর্টসকে মরগান বলেছেন, ‘দর্শকেরা হতাশ। যদিও আমি এর কারণটা বুঝতে পারছি না। বেয়ারস্টোর আউটটি বোকামির ফসল। বেয়ারস্টো ক্রিজ ছাড়ার সময় বল “ডেড” হয়নি, সে তার নিজস্ব জগতে ছিল—যেটা আপনি করতে পারেন না। বরং ক্যারি পরিস্থিতি বুঝে সুযোগটা নিয়ে স্মার্টনেসের পরিচয় দিয়েছে। আমি এই আউটে ক্রিকেটের চেতনা পরিপন্থী কিছু দেখি না।’
স্ট্রাউসও বলেছেন, ‘এটা ক্রিকেটের চেতনার পরিপন্থী কি না, তা নিয়ে আপনি তর্ক করতে পারেন। কিন্তু সত্যটা হলো, এই আউটে কোনো ভুল ছিল না। হ্যাঁ, দর্শকেরা এটাকে ইংল্যান্ডের প্রতি দেশাত্মবোধের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে।’