যাত্রী নিয়ে আজ বুধবার প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতু পাড়ি দেবে ট্রেন। এর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নতুন রেল যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মাসুদ রানা জানান, খুলনা থেকে আজ রাত পৌনে ১০টায় আন্তনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছাড়বে। কুষ্টিয়ার পোড়াদাহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ভাঙা হয়ে ভোর চারটার পরপর ট্রেনটি পদ্মা সেতু অতিক্রম করবে। ঢাকায় পৌঁছাবে ভোর ৫টা ১০ মিনিটে। পুনরায় ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে বিকেল ৩ টা ৫০ মিনিটে যাত্রী নিয়ে খুলনায় পৌঁছাবে ট্রেনটি।
আগে এই ট্রেনটি অনেক পথ ঘুরে যমুনা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসা করতো। নতুন রুটে দূরত্ব কমে যাওয়ায় সময় কম লাগবে অন্তত ২ ঘণ্টা।
মাসুদ রানা বলেন, ‘নতুন এই রুটে ট্রেন চলাচলের খবরে যাত্রীদের আগ্রহ বেড়েছে। রুট পরিবর্তনের ফলে আগের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা বাড়বে। নতুন রুটে দূরত্ব কমবে প্রায় ২১২ কিলোমিটার। এই রুটে সময় কম লাগবে অন্তত ২ ঘণ্টা।’
খুলনা রেল স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনটি ১৩টি বগি নিয়ে যাতায়াত করবে। রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন ট্রেনে মোট আসন সংখ্যা ৮৬০টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ার ৪৯২টি, এসি বার্থ ৪৮টি ও স্নিগ্ধা ৩২০টি। আর ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনের আসন সংখ্যা ৯০৮টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ার ৪৯২টি, এসি সিট ৯৬টি ও স্নিগ্ধা ৩২০টি।
ভাড়া কত?
খুলনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত সুন্দরবন ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে শোভন চেয়ার শ্রেণি ৫০০ টাকা, প্রথম শ্রেণির সিট ভাড়া ৬৬৫ টাকা, প্রথম বার্থ শ্রেণির ভাড়া ৯৯৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ৮৩০ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৯৯৫ টাকা ও এসি বার্থ শ্রেণির ভাড়া ১ হাজার ৪৯৫ টাকা। বর্তমানে যমুনা সেতু দিয়ে সুন্দরবন এক্সপ্রেসের শোভন চেয়ার শ্রেণিতে ভাড়া ৫০৫ টাকা।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মাসুদ রানা বলেন, ‘আগের রুটের তুলনায় বর্তমান রুটে ভাড়া খুব বাড়ে-কমেনি।’
যমুনা সেতুর পরিবর্তে পদ্মা সেতু দিয়ে খুলনা-ঢাকা রুটের ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেন চালানোর প্রস্তুতিতে খুশী খুলনার মানুষ। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘বাসের চেয়ে ট্রেনে যাতায়াত আরামদায়ক হওয়ায় অনেকে ট্রেনে খুলনা থেকে ঢাকায় যেতে চায়। কিন্তু পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেনে যেতেও বাসের চেয়ে বেশি সময় লাগবে। সে কারণে খুলনা-ঢাকা রুটে সরাসরি রেল লাইন স্থাপন এখন সময়ের দাবি। এছাড়া দূরত্ব কমে যাওয়ায় ভাড়া কমানো উচিৎ।’
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ‘যমুনা সেতুর পরিবর্তে পদ্মা সেতু দিয়ে সুন্দরবন ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। কিন্তু তারপরও ট্রেনে অনেক পথ ঘুরে তারপর ঢাকায় যেতে হবে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, খুলনা-ঢাকা রুটে সরাসরি ট্রেন চালু করা, যাতে অযথা বাড়তি পথ ঘুরতে না হয়।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় যেতে সময় লাগে ৯ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু দিয়ে লাগবে ৭ ঘণ্টার মতো। অথচ পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে যেতে লাগে মাত্র ৪ ঘণ্টা। সরাসরি রেল লাইন স্থাপন করা গেলে তখন পদ্মা রেল সেতুর সুফল পুরোপুরি খুলনাবাসী পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন রুটে দূরত্ব অনেক কমছে। তাহলে তো আগের তুলনায় ভাড়া আরও কমানো উচিৎ।’
মামুন রেজা, খুলনা ব্যুরো