পদ্মাসেতু রেল সংযোগের পরামর্শক ব্যয় ৩০১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ বাড়ায় এই ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের বলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আর্মি ইন অ্যাসোসিয়েশন উইথ বিআরটিসি, বুয়েটকে মেয়াদ ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩০১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এই ব্যয় বাড়ানোর ফলে এ খাতের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪২ কোটি ২৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। মেয়াদ বাড়ানোর কারণেই এই ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে গত ৪ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে পদ্মাসেতুতে ট্রেন চলে। প্রথম যে ট্রেনটি পদ্মা সেতু পার হয়, তার ইঞ্জিন আনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেটি টেনে নিয়ে গেছে চীন থেকে আনা সাতটি কোচ। ইঞ্জিন ও কোচ ফরিদপুরের ভাঙ্গা প্রান্ত থেকে রওনা হয় দুপুর ১টা ২১ মিনিটে। এরপর প্রথম স্টেশন মালিগ্রাম সংলগ্ন বগাইলে পৌঁছায় ১টা ৪১ মিনিটে। ট্রেনটি গড়ে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে চলে। ২টা ১০ মিনিটে শিবচরের পদ্মা স্টেশনে এসে পৌঁছায়। ২টা ৪০ মিনিটে পদ্মা সেতুতে ওঠে। পদ্মা সেতু পার হতে ১৬ মিনিট লাগে ট্রেনের। সব মিলিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া স্টেশন- এই ৪২ কিলোমিটার রেলপথে আসতে ট্রেনের সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা।
পরীক্ষামূলক উদ্বোধনের দিনে পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে ছিল উৎসুক জনতার ঢল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু ঘিরে নতুন রেলপথ বদলে দেবে দেশের রেল নেটওয়ার্ক। বর্তমানে রেলপথে ঢাকার সঙ্গে খুলনার দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু হয়ে যশোর রেলপথে যাতায়াতে রাজধানী থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পদ্মা সেতুর রেল রুটটিও। পাথরবিহীন রেললাইন এই প্রথম তৈরি হলো বাংলাদেশে।
জাজিরা প্রান্ত থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেনের তিনটি স্টেশন রয়েছে। শিবচরে দুটি স্টেশন এবং ভাঙ্গায় জংশন রয়েছে। স্টেশনগুলোর ওপর দিয়ে ৩২ কিলোমিটার লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ভাঙ্গা জংশনটি আধুনিকায়ন করার কাজ চলছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে পদ্মা সেতু হয়ে চার জেলা (মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেলযোগাযোগ স্থাপিত হবে।
পরীক্ষামূলক উদ্বোধনের দিন রেলপথমন্ত্রী ভাঙ্গা থেকে ট্রেনে করে এসে মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনে নেমে সাংবাদিকদের বলেন, পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশের বেশি। আর পুরো প্রকল্পকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৭৪ ভাগ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯২ ভাগ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার অংশে আগামী সেপ্টেম্বরে যাত্রীবাহী রেল চলাচলের আশার কথা জানান তিনি।
আগামী বছরের জুনে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেল চলাচল করবে। লেভেল ক্রসিংবিহীন এই রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের রেল স্টেশনসহ নতুন ১৪টি স্টেশন নির্মাণ এবং পুরোনো ছয়টি স্টেশন উন্নয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে।