রাজধানীসহ সারাদেশে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় আজ দুপুরের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি তুলেছেন ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এর প্রেক্ষিতে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, যে কারণে তারা আমাকে পদত্যাগ করতে বলছেন, সেই পরিস্থিতির যদি উন্নতি করতে পারি, তাহলে তো পদত্যাগের প্রশ্ন আসবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন উন্নতি হয়, আমি সেই ব্যবস্থা করছি। আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে এবং আরও উন্নতি হতে থাকবে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসায় আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা যেভাবে হোক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করব। দিনে-রাতে যেখানে প্রয়োজন হবে, আমাদের বাহিনী সেখানে যাবে এবং এসব প্রতিহত করবে। আওয়ামী দোসর যারা এসব কাজ করছে, তাদের আমি ঘুম হারাম করে দেব। এ ছাড়া সব বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছি, তারা টহল আরও বাড়াবে। আগামীকাল থেকে যেন কোথাও কোনো অপরাধ না ঘটে, সেজন্য তারা ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও বলেন, এটা যদি তারা ভালোভাবে কার্যকর করতে না পারে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আমি অ্যাকশন নেব। তাই আপনারা (সাংবাদিকদের উদ্দেশে) দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবেন, দিনে দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে এবং এটা অবনতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
সবাই যেখানে আপনার পদত্যাগের দাবি করছে, সেখানে আপনি নিজে আপনার ব্যর্থতা দেখেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি যে অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব নিয়েছিলাম সেই অবস্থা থেকে সক্রিয় হয়েছে নাকি হয়নি? এটা আপনারা (সাংবাদিক) ভালো বলতে পারবেন। পুলিশ-আনসারের অবস্থা কী ছিল? ওই অবস্থা থেকে উন্নতি হয়েছে না হয়নি এটা আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।
এ পর্যন্ত ডেভিল হান্টে যে সাড়ে ৮ হাজার গ্রেপ্তার করা হলো তারা কারা এবং সারাদেশেই যারা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা কেন ধরা পড়ছে না? এমন প্রশ্নে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে ডেভিল হান্ট অপারেশনে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে যে পরিমাণ (সংখ্যক) গ্রেপ্তার করা উচিত সে পরিমাণ হয়তো হচ্ছে না। যেমন বাসে ডাকাতির ঘটনায় সাভার থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর এ গ্রেপ্তার চলতে থাকবে।
এ সময় মোটরসাইকেলে করে এসে ছিনতাইয়ের যে ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হয়।
জবাবে তিনি বলেন, মোটরসাইকেলে হেলমেট ছাড়া যেন কেউ না চলে এবং দুজনের বেশি না চলে সেজন্য আমি অলরেডি নির্দেশনা দিয়েছি।
ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ধর্ষণও বেড়েছে, আর এতে নারীরা উদ্বিগ্ন। অভিযোগ উঠেছে, স্বরাষ্ট্র কিংবা আইন মন্ত্রণালয় থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, মা-বোনদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। তাদের ব্যাপারে আমরা সবসময় কনসার্ন (সচেতন) এবং তাদের কোনোভাবে যেন সমস্যায় পড়তে না হয় সে ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সজাগ আছে।
শুধু ডেভিল হান্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি অন্য অপারেশনে যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী? সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করা হয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে।
উত্তরে তিনি বলেন, চোর-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবসময় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যথেষ্ট চেষ্টার পরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, সমস্যাটা কোথায়? আর আপনি নির্দেশ দেওয়ার পরও দৃশ্যমান উন্নতি কেন হয়নি- জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আগামীকাল থেকে ডেফিনেটলি ইমপ্রুভমেন্ট।
এর আগে, সারাদেশে চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ‘জুলাইয়ের রক্তের দাম চাই, নিরাপদ দেশ চাই’, ‘সারাদেশে অপরাধ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘এক দুই তিন চার, জাহাঙ্গীর গদি ছাড়’, ‘দফা এক দাবি এক, জাহাঙ্গীরের পদত্যাগ’, ‘মা বোনদের নিরাপত্তা দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।