পণ্য খালাস না হওয়ায় ছুটিতে জমেছে ১১ হাজার কনটেইনার

0
9
চট্টগ্রাম বন্দর

ঈদের আগে গত মে মাসে কাস্টমসের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতি ও পরিবহন ধর্মঘটে বন্দরে জাহাজজট তৈরি হয়েছিল। বন্দর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগেই শুরু হয় ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি। ছুটিতে বন্দর সচল থাকলেও ব্যবসায়ীদের পণ্য খালাস কমে গেছে। তাতে এখন আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা দ্রুত পণ্য খালাস না করলে বন্দরে জট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর তাতে সেবার মান ব্যাহত হওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, বন্দরের কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতার ৮০ শতাংশ জায়গায় এখন কনটেইনার রাখা হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় এই জায়গা কমে আসছে। কনটেইনার রাখার জায়গা কমলে পণ্য খালাস কার্যক্রমসহ বন্দর পরিচালন কার্যক্রমে সময় বেশি লাগে। তাতে পণ্য হাতে পেতে ব্যবসায়ীদের সময় লাগবে বেশি।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ৫ জুন থেকে একটানা ১০ দিনের ছুটি শুরু হয়। ছুটির সময় শুধু ঈদের দিন এক পালায় বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে এক পালা ছাড়া ছুটির সময় জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর কাজ হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা আমদানি হওয়া এসব পণ্য খুব একটা খালাস করেননি। ফলে কনটেইনার জমতে শুরু করে বন্দরে। ঈদের ছুটি শেষ হবে আগামীকাল শনিবার। এরপর রোববার থেকে স্বাভাবিক গতিতে কাস্টমসসহ সরকারি–বেসরকারি কার্যালয় খোলা থাকবে। খোলার আগে কনটেইনারের স্তূপ আরও বাড়তে পারে বলে বন্দরের কর্মকর্তারা শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ছুটি শুরুর আগে ৪ জুন বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত তা ৩৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার মানে ছুটির এ সময়ে গত সাত দিনে জমেছে ১১ হাজার কনটেইনার।

কনটেইনারের স্তূপ বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ হলো, বন্দর থেকে কনটেইনার পণ্যের খালাস কমে যাওয়া। বন্দরে প্রতিদিন ১০–১১টি  জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো হয়। শুল্কায়ন শেষে তা বন্দর থেকে খালাস করে নেন আমদানিকারকেরা। তবে ছুটির সময় পণ্য খালাস কমে গেলে তাতে কনটেইনারের জট বেড়ে যায়।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির মধ্যে গত সাত দিনে বন্দরে আসা বিভিন্ন জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো হয়েছে ২৪ হাজার। এর মধ্যে ব্যবসায়ীরা খালাস করে নিয়েছেন সাড়ে ৯ হাজার কনটেইনার। জাহাজ থেকে নামানো সাড়ে ১৪ হাজার কনটেইনার রয়ে গেছে বন্দরে। এ সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু খালি কনটেইনার সরিয়ে নেয়। তাতে পণ্যবোঝাই কনটেইনার রাখার কিছু জায়গা তৈরি হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ঈদের লম্বা ছুটির সময়ের মধ্যে বন্দরের কার্যক্রম সচল রয়েছে। এবার যাতে জট না হয় সে জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যে কারণে এখন পর্যন্ত বন্দর বড় ধরনের জট তৈরি হয়নি। তবে ব্যবসায়ীরা এখন দ্রুত পণ্য খালাস না করলে কনটেইনারের সংখ্যা বাড়বে। তাতে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে চার হাজারের বেশি কনটেইনার খালাস হয়। এবার ছুটির সময় গত সাত দিনে গড়ে খালাস হয়েছে ১ হাজার ৩৭৭ কনটেইনার। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় প্রায় দুই হাজার কনটেইনার খালাস হয়েছে। খালাসের হার পাঁচ হাজারে উন্নীত না হলে জট কমবে না বলে মনে করছেন বন্দরের কর্মকর্তারা।

পণ্য খালাস কমে যাওয়ার বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বন্দরের কার্যক্রম সচল থাকলেও পণ্য খালাস হওয়ার বিষয়টি সরকারি–বেসরকারি অনেকগুলো সংস্থার ওপর নির্ভরশীল। যেমন পণ্য খালাসের জন্য কাস্টমসের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকতে হয়। এ ছাড়া অনেকগুলো সরকারি সংস্থার অনুমোদন দরকার হয়। ছুটির সময় কাস্টমসসহ বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম সীমিত ছিল। আবার পরিবহন, কর্মী–সংকটের মতো নানা কারণে চাইলেও পণ্য খালাস করার সুযোগ কম। ফলে স্বাভাবিক সময়ের মতো ছুটিতে পণ্য খালাস হয় না।

বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, ছুটির সময় বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর কাজ স্বাভাবিক ছিল। তাতে স্বাভাবিক গতিতে রপ্তানির পণ্যবোঝাই কনটেইনার বন্দর ছেড়ে গেছে। তাতে জাহাজের জটও খুব একটা বাড়েনি। ছুটি শুরু হওয়ার আগে বন্দরের জেটিতে ভেড়ানোর অপেক্ষায় ছিল ১৬টি। গতকাল বৃহস্পতিবার তা নেমে আসে ১২টিতে। এ সময়ে প্রতিদিন বন্দরে ১০–১১টি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো–নামানো হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.