পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ

0
163
ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখাকে সামনের দিনে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে সরকার। আসন্ন রমজান মাসে তাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজার মনিটরিংয়ে দায়িত্ব পালন করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অবৈধভাবে পণ্য মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বাজার মনিটরিংয়ে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন জেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা।

বুধবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ২০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধিবেশন হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গেও একটি অধিবেশন ছিল ডিসিদের। এদিন স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত ইস্যুগুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। তিন দিনের এ সম্মেলন আজ শেষ হচ্ছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় যে কোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে শক্তহাতে ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ যাতে অবৈধ সুযোগে বাজার অস্থিতিশীল না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে ডিসিদের। স্থানীয় পর্যায়ে বাজার মনিটরিংসহ টিসিবির বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তার জন্য ডিসিদের প্রশংসা করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

অন্যদিকে ডিসিদের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ে কর্মকর্তা সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, বাজার মনিটরিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে। কিন্তু জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত কর্মকর্তা না থাকায় অনেক সময় সমস্যা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের এ বিষয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও কিছু উদ্যোগ আছে, কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়। বাজার কমিটির নেতাদের মনিটরিংয়ে আরও বেশি ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। বাজার কমিটিগুলোর সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন ডিসিরা। আর এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখার সুযোগ সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন জেলা প্রশাসকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডিসি বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু অদৃশ্য বিষয় প্রভাব রাখে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি কিংবা অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট করতে গেলে রাজনৈতিক তদবির শুরু হয়। এসব সমস্যা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ভবিষ্যতে তা আরও কমিয়ে আনার জন্য সামাজিক এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ।

স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়েও সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের কোনো অবকাশ নেই। কারণ প্রত্যেকেই স্ব স্ব জায়গা থেকে আইনবিধি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন। কিছু ক্ষেত্রে ধারণাগত পার্থক্য হতেই পারে।

আলোচনায় সরকারি বিভিন্ন ভাতা প্রকৃত অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ। এ বিষয়ে ডিসিদের পক্ষ থেকে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভাতা আরও বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। ডিসিরা বলেছেন, এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১১১টি সেবা বিধবা, অসহায় শিশু, অন্ধ, বধির এবং পক্ষাঘাতগ্রস্তসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষের কাছে পৌঁছায়। কিন্তু এসব অনুদানের পরিমাণ খুবই কম। অনুদানের টাকা যাতে বাড়ানো হয় সে বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ডিসিরা।
বিজয় কিবোর্ড ?বাধ্যতামূলক নয় : অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে বিজয় কিবোর্ড সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সম্মেলনে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

মোবাইল ফোন বিক্রির ক্ষেত্রে বিজয় কিবোর্ড সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা গত ১৩ জানুয়ারি জারি করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এ বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আপনি কোনো সফটওয়্যার রাখতে পারেন, ইনস্টল করতে পারেন, ফেলে দিতে পারেন, নতুন করে ইনস্টল করতে পারেন। অতএব, বাধ্যতামূলক শব্দ প্রয়োগ করার কিছু নেই। এটি বাধ্যতামূলক নয়।’

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টাওয়ার বসানো যাচ্ছে না। কারণ কিছু লোক অপপ্রচার চালায় টাওয়ার থেকে রেডিয়েশন ছড়ায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলো অপপ্রচার। টাওয়ার বসাতে দিতে হবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পূর্বানুমতির দরকার নেই : দেশে কোথাও কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের আগে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে সংস্কৃতির মাঝে যেন ‘অপসংস্কৃতি’র অনুপ্রবেশ না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এ সব কথা বলেছেন।

যাত্রাপালা আয়োজনে স্থানীয় প্রশাসন অসহযোগিতা করছে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘সরকার থেকে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই। শুধু যাত্রা কেন, কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনেই আগে থেকে প্রশাসনের অনুমতির দরকার নেই। আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের এ বিষয়ে চিঠিও পাঠিয়েছি।’

খাদ্য সংকটের আশঙ্কা নেই : কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, বরিশালের অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনা এবং হাওরে বন্যার আগেই যেন ধান কেটে ঘরে তোলা যায়, এমন জাত উদ্ভাবনের প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। খাদ্য নিয়ে ডিসিরা কোনো সংকটের আশঙ্কার কথা বলেননি বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

তাৎক্ষণিক তথ্য চায় দুদক : সম্মেলনে দুর্নীতি-সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানাতে আহ্বান জানিয়েছেন এর চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন আব্দুল্লাহ। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ভূমি অফিসে দুর্নীতির অভিযোগ বেশি থাকার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু ভূমি অফিস না, জেলা পর্যায়ে কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়, সে বিষয়ে নজর রাখতে জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.