নোয়াখালী, ফেনী ও খাগড়াছড়ি জেলায় বৃষ্টি কমলেও অনেক অঞ্চল এখনো পানির নিচে

0
20
নোয়াখালী পৌরসভার অনেক এলাকায় আজও পানি জমে থাকতে দেখা যায়। অনেক বসতবাড়ি থেকে সরেনি পানি। আজ দুপুরে শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুরের এলাকায়

গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির তীব্রতা অনেকটা কমলেও নোয়াখালী, ফেনী ও খাগড়াছড়ির নিচু এলাকার বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। নোয়াখালী পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের নিচু এলাকা এখনো জলমগ্ন। ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের কিছু গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়নের ৮০০ পরিবার এখনো পানিবন্দী।

নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা

নোয়াখালী পৌরসভার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, কৃষ্ণরামপুর, মাস্টারপাড়া, মাইজদী বাজার, সরকারি মহিলা কলেজ, রেলস্টেশন ও হরিনারায়ণপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওই সব এলাকার বেশির ভাগ সড়ক এখনো বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। জলমগ্ন রয়েছে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার বেশির ভাগ বাড়িঘর। পায়ের গোড়ালি পরিমাণ পানি জমে আছে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনেও।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা শহর মাইজদীতে ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি যা হয়েছে মঙ্গলবার দিনের বেলায়। রাতে কিংবা আজ বুধবার সকাল থেকে তেমন বৃষ্টি হয়নি। তবে আগামী কয়েক দিনে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পানিনিষ্কাশন না হওয়ায় তাঁর কার্যালয়ের আঙিনাও প্লাবিত হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান বলেন, শহরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নয়নে পৌরসভার কর্মীরা দিন–রাত কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে পানিনিষ্কাশনের ছোট–বড় নালাগুলো পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আজ দুপুর নাগাদ অনেক এলাকায় পানি কমে গেছে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে পানি সরেনি

ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে গেলেও ফুলগাজী ও পরশুরামের কিছু গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে ওই সব এলাকার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গতকাল ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ১ হাজার ৬০০ পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে।

ফেনীর ফুলগাজীর উত্তর দৌলতপুর এলাকায় মুহুরী নদীর বেড়ীবাঁধের তিনটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।  ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত করেছে আশপাশের এলাকা। গতকাল সকালে তোলা
ফেনীর ফুলগাজীর উত্তর দৌলতপুর এলাকায় মুহুরী নদীর বেড়ীবাঁধের তিনটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত করেছে আশপাশের এলাকা। গতকাল সকালে তোলা

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকেই মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামতে শুরু করেছে। তবে বেড়িবাঁধের ভাঙা স্থান দিয়ে এখনো নদীর পানি গ্রামের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া জানান, পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার ফুলগাজী সদর, দরবারপুর, আমজাদ হাট ও মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ২১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯০০ পরিবারকে শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পানিতে পড়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে পরশুরাম উপজেলায় ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল ৭০০ পরিবারকে শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। এরপর তাদের চাল সহায়তা দেওয়া হবে।

খাগড়াছড়িতে পানিবন্দী ৮০০ পরিবার

পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় দীঘিনালা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের পানি এখনো কমেনি। এখনো উপজেলার মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়নে পানিবন্দী রয়েছে প্রায় ৮০০ পরিবার। মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকী বলেন, টানা ভারী বৃষ্টিতে মেরুং ইউনিয়নে প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক শ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। ৪০০ জনের মতো লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও বেশির ভাগ পানিবন্দী মানুষ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ বলেন, উপজেলায় ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাঙামাটির লংগদু উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যারা রয়েছে তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার ও পানি বিতরণ করা হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.