নেত্রকোণা জেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া গ্রামের ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (ডুয়েট) এর সাবেক অধ্যাপক প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নানের বাড়ি থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণের আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। টানা ৩০ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালানোর পর বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য, বিদেশি পিস্তলসহ জঙ্গি প্রশিক্ষণের ৮০টি আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ৬টি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) নিস্ক্রিয় করে এন্টি-টেররিজম টিম।
শনিবার (৮ জুন) দুপুর থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান শেষ হয় রোববার (৯ জুন) সন্ধ্যায়। তবে আস্তানা থেকে কাউকেই আটক করতে পারেনি পুলিশ।
গত ৬ জুন অস্ত্র মামলার আসামি মো. হামিম হোসেন ফাহিম ওরফে আরিফ (৩২) নামে এক যুবক নরসিংদীতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার আরিফ পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানার মাঝিবাড়ি এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে। তিনি নেত্রকোণার দেওপুর ভাসাপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন। মএমন তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোণা মডেল থানার ওসি আবুল কালাম খোঁজ নিয়ে প্রকৌশলী আব্দুল মান্নানের বাড়ি তল্লাশি করেন। তল্লাশিকালে বিদেশি একটি পিস্তল ও ১৭ রাউন্ড গুলিসহ বেশ কিছু আলামত পান।
অভিযান শেষে ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শাহ আবিদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন।
ডিআইজি বলেন, ‘শনিবার দুপুরে সুনির্দিষ্ট একটি তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের নেত্রকোণা জেলা পুলিশের একটি টিম, সদর থানা পুলিশের ওসি, সার্কেল এসপিসহ এখানে আসেন। আমাদের কাছে একটি সংবাদ ছিল যে এখানে যারা বসবাস করতেন তাদের একজন নরসিংদীতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমরা জানতে পারি, এখানকার যে বাড়িটি এই বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকতেন। বাড়িটির মালিক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। এটা উনার একটা ফিশারি প্রজেক্ট ছিল। নরসিংদীতে গ্রেপ্তার হওয়া হামিম হোসেন ফাহিম, ওরফে আরিফ যে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে তিনি এখানে বসবাস করত তার পরিবার নিয়ে। আমরা অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছি তারা ২-৩ বছর যাবৎ এখানে বসবাস করছেন। নরসিংদীর পুলিশ আমাদেরকে জানায়, এখানে এ রকম একটা ফিশারি প্রজেক্ট আছে কিনা? আমরা খোঁজ নিয়ে তাদের নিশ্চিত করি যে নেত্রকোণাতে এ রকম একটি প্রজেক্ট আছে।’
ডিআইজি বলেন, ‘এ বাড়ির যে মালিক আব্দুল মান্নান তিনি, ওসি সাহেবকে ফোন দিয়ে জানান যে তারা এখানে ভাড়া থাকতো। এবং তিনি জানতে পারেন তাদের একজন অস্ত্র মামলায় আটক হয়েছে। তিনি ধারণা করছিলেন যে এখানে হয়তো আরো কিছু থাকতে পারে এবং বাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ এখানে শনিবার এসে বিধি মোতাবেক এলাকার লোকদের নিয়ে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং প্রাথমিক তল্লাশিতে একটি অস্ত্র ও গুলি পাওয়া যায়। পুলিশ আরও তদন্ত করার পর বুঝতে পারে ভেতরে বিস্ফোরক দ্রব্য আছে এবং এখান থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হতে পারে, যা নিরাপদ নয়। এরই প্রেক্ষিতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পর এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা প্রতিনিধি পাঠায়।’
ডিআইজি আরও বলেন, ‘এখানে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, ১৭ রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, দেশি রামদা, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ, খেলনা একে-৪৭, ইলেকট্রিক করাত, মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম, ছয়টি সিসিটিভি ক্যামেরা, দুটি ফ্লাশ লাইট, একটি মার্শাল আর্ট ড্রেস, পাঁচটি এন্ড্রয়েড ফোন, সাতটি বাটন ফোন, একটি ল্যাপটপ, দুটি দূরবীন, অত্যাধুনিক কম্পাস, সিলিকনের তৈরি মানবাকৃতির পাঞ্চিং বক্সসহ ৮০টি আলামত জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি এখানে যে দুটি আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে সেগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। একটি বোমা অবস্থানগত কারণে বাসার ভেতরেই নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ করতে আমরা বাধ্য হয়েছি। আরেকটি বাইরে নিয়ে এসে আপনাদের সামনেই নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ করা হয়েছে। ভেতরে যে দুটি বোমা পাওয়া গেছে, সেই দুটি বোমা যথেষ্ট শক্তিশালী। বোমা দুটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের কারণে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু অসাবধানতা বসত যদি এগুলো বিস্ফোরিত হতো তাহলে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতো। আমরা যেসব জিনিসপত্র এখান থেকে উদ্ধার করেছি তা দেখে আমাদের মনে হয়েছে এটা একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।’