নীলক্ষেতে সাত কলেজের শিক্ষার্থী অসুস্থ

0
197
ঢাবির ‘প্রহসনের বিরুদ্ধে’ প্রতিবাদ জানাতে তারা ‘বিষপান করে’ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

এক দফা দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে চলমান অবরোধ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাবির ‘প্রহসনের বিরুদ্ধে’ প্রতিবাদ জানাতে তারা ‘বিষপান করে’ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

তবে শিক্ষার্থীদের এই দাবির সত্যতা প্রাথমিকভাবে যাচাই করতে পারা যায়নি।

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’

রাজধানী সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এখানে জড়ো হয়েছেন। সাতজন শিক্ষার্থী বিষপান করেছেন বলে জানতে পেরেছি। তারা সঙ্গে করে বিষ নিয়ে এসেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’

তবে সাত কলেজ আন্দোলনের সমন্বয়ক তসলিম চৌধুরী বলেন, বিষপানের কথা গুজব। আমাদের আটজন এমনিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আজ রোববার দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে চতুর্দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন এ পথে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ।

শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নির্ধারিত সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দেওয়া।

দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, সিজিপিএ শর্ত পূরণ না করলে আবার সব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে— এটি বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত। আমরা এ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মানি না। আমরা প্রতিনিয়ত আন্দোলন করছি। তবে প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কোনো কিছু বলছে না। সমাধান না আসা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

আন্দোলনে আসা শিক্ষার্থী মাসুম আহমেদ বলেন, সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে সর্বোচ্চ তিন কোর্স পর্যন্ত মানোন্নয়ন দিয়ে পরবর্তী বর্ষে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে হবে আমাদের। সেই দাবির ধারাবাহিকতায় আজ আমাদের এ অবরোধ কর্মসূচি চলছে।

মেহেরুন্নেসা আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবির বিষয়ে আমাদের সঙ্গে ১৯ বার আলোচনায় বসেছে। আমরা আন্দোলনের নামলেই শিক্ষকরা আসেন আলোচনায় বসার জন্য। আজও কয়েক দফা শিক্ষকরা এসেছেন। কিন্তু আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনড়। আগে নোটিশ, পরে সড়ক ছাড়ব।’

নাজমুন্নাহার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার তিন মাসে ফলাফল দেওয়ার কথা থাকলেও দেড় বছর পরে দেয় ঢাবি। কলেজগুলোতে ক্লাস নেয় না। আমরা তো ফেল করে পাস চাচ্ছি না। আমরা পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন চাচ্ছি। ফেল করা বিষয়ে পরীক্ষা তো দিব পরে। তবুও কেন, কোনো ডিসিশন দিতে পারছে না ঢাবি?

দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা।

বেলা বারোটায় শুরু হওয়ার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (দুপুর সোয়া দুইটা) এখনো চলছে। যে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে নিউমার্কেট ও লালবাগ থানা পুলিশের সদস্যরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন।

এর আগে গত ১৬ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। ওই সপ্তাহেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশনও পালন করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার ফোন করা হরেও তাকে পাওয়া যায়নি।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এই কলেজগুলোতে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.