নীতি সুদহার অপরিবর্তিত, বেসরকারি খাতের জন্য সুখবর নেই

নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

0
12
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেসরকারি খাতে একধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। নতুন প্রকল্পের উদ্যোগ কম, উল্টো চালু থাকা অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। কর্মসংস্থানেও খরা নেমে এসেছে। ঋণের সুদহার বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ হারে আরোপ করা পাল্টা শুল্কের চাপ নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেখা যায়, এখনো মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। তাই নীতি সুদহারে কোনো পরিবর্তন হবে না। বেসরকারি খাতের পাশাপাশি মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকেও আপাতত নজর নেই মুদ্রানীতিতে।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে নতুন মুদ্রানীতি তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক এজাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার ও হাবিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর কথা বলেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি না কমলে নীতি সুদহার রক্ষণশীল থাকবেই। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা না থাকলে প্রবৃদ্ধির কথা ভুলে যেতে হবে। টাকা ছাপিয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো যায়, তবে সেটা টেকসই হবে না। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে লেনদেনে ভারসাম্য ও ডলারের দামে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। মূল্যস্ফীতিও কমছে। এখন যে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, সেটা যথেষ্ট। এর মধ্যে কোনো ভেজাল নাই। আগামী বছর সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এ জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।’

গভর্নর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে। তবে এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসেনি। আমাদের লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি ৩ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। মূল্যস্ফীতি কমে গত জুনে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমেছে। বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা এবং উৎপাদন ভালো হওয়ায় এটা কমছে। চাল ছাড়া সব পণ্যের দর স্থিতিশীল রয়েছে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এখন আমানতের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নেমেছে। সুদহার বৃদ্ধির ফলে আমানত বাড়বে। আমানত না বাড়লে ঋণ বাড়ানো যাবে না। আমরা ব্যাংক থেকে ডলার কিনে টাকা দিচ্ছি। এতে বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়ছে। এভাবে একসময় সুদের হার এক অঙ্কে নেমে আসবে।’

ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘যেসব ব্যাংককে টাকা দেওয়ার পরও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি তাদের একীভূত করা হবে। তবে আমানতকারীদের চিন্তার কিছু নেই। সবার টাকা নিরাপদ থাকবে। এসব ব্যাংক আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় দাঁড়াবে। আমরা আশাবাদী এ জন্য সরকার যে টাকা বিনিয়োগ করবে, তা-ও ফেরত আসবে। আপাতত ৫ ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে কাজ এগোচ্ছে।’

মুদ্রানীতির লক্ষ্য

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামলেই নীতি সুদহার কমানো হবে। নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য আগামী ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ২ এবং আগামী বছরের জুনে ৮ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের মুদ্রানীতিতে গত জুনে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান নীতি সুদহার (রেপো) ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে। মূলত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখে রেপোর বিপরীতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়। অন্যদিকে নতুন মুদ্রানীতিতে আন্তব্যাংক ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে নীতি সুদহার স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। আর স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৮ শতাংশই থাকছে। ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে টাকা রাখার ক্ষেত্রে এ সুদহার প্রযোজ্য হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে আগামী বছরের জুন নাগাদ গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা সামান্য বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরা হয়েছে। গত জুন পর্যন্ত মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ছিল। তবে এর বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৭ শতাংশ। সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ। গত অর্থবছর ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলনের বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.