আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত জাতিসংঘ। তবে তাদের সহযোগিতা দরকার নেই বলছে বাংলাদেশ। নির্বাচনে জাতিসংঘের সহযোগিতা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ যথেষ্ট পরিপক্ব, তাদের সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।
গতকাল সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। বৈঠক শেষে গোয়েন লুইস সাংবাদিকদের বলেন, সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা শক্তিশালীকরণ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা– এ বিষয়ে তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলেছেন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি জানতে চেয়েছি। সরকার থেকে কী ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে– এর উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে জাতিসংঘের সমন্বয়কারী বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। জাতিসংঘ নির্বাচনে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে জানিয়েছি। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক বা অন্যান্য সহযোগিতার প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা জানিয়েছে, তাদের কোনো সহযোগিতা দরকার নেই।
বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতা আমাদের নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা যথেষ্ট পরিপক্ব। নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যদিও অনেক উন্নত দেশ এগুলো নেয় না। কিন্তু আমাদের এতে কোনো আপত্তি নেই। সুন্দর, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো দরকার, সেগুলো আমরা তৈরি করেছি।
তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি করেছি। বায়োমেট্রিক ভোটার তালিকায় যাতে কোনো ধরনের ভুয়া ভোট না হয়। আমরা একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছি। তারা যথেষ্ট সক্ষমতা রাখে তাদের কাজে। সে জন্য আমাদের অন্যদের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন নেই।
সাংবাদিক শামসুজ্জামান প্রসঙ্গ : জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি শিশুকে নির্যাতন করার জন্য তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। দ্বিতীয় ইস্যু হলো– তিনি আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে তামাশা করেছেন। আমাদের চেতনার সবচেয়ে বড় ধন স্বাধীনতা। ওটাকে নিয়ে তামাশা করবেন, এটা দেশের জনগণ গ্রহণ করবে না।
অপরাধ করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পার পাওয়া যাবে না বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাংবাদিকের নাম দিয়ে অপরাধ করবেন, এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। অপরাধ করলে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে।
রোহিঙ্গা অর্থায়ন : বৈঠকে রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন জোগাড় নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অর্থ কমছে– এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, যারা ওয়াদা করেছে, তাদের কাছ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থ সংগ্রহ করেন।
রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ প্রদানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিন থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে, এখনও করছে। তাদের কোনো গাফিলতি নেই। কিন্তু অন্যান্য অনেক দেশই আগে অনেক সাহায্য করেছে, এখন অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ গুরুত্ব হারানো নিয়ে তিনি বলেন, মনোযোগ যেন থাকে আমরা বিভিন্নভাবে এ ইস্যুটা তুলে ধরেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্ররা এটার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রত্যাবাসন নিয়ে আশার কথা শুনিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার প্রত্যাবাসন। মিয়ানমার সরকার বারবার ওয়াদা করেছে, তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে। তাই আমরা আশাবাদী। তবে কবে সেটা, আমি জানি না।
রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন কমে যাওয়া নিয়ে গোয়েন লুইস বলেন, বিদ্যমান দেশগুলো যারা সহযোগিতা করছে, তাদের ছাড়াও আমরা নতুন দেশের সন্ধান করছি। ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিশ্বে বহু সংকট বিদ্যমান রয়েছে। পুরো বিশ্বকে এ বছরটি বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে অতিক্রম করতে হবে। রোহিঙ্গা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে। আমরা সহযোগিতা নিশ্চিত করব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছে। তবে জাতিসংঘের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যারা যাচ্ছেন, তাদের নিরাপত্তা ও সহায়ক পরিবেশ।
র্যাব প্রসঙ্গ : সম্প্রতি জার্মানভিত্তিক ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র্যাবকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে– এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার হচ্ছে না, নিরাপত্তার উদ্দেশে ব্যবহার হচ্ছে।