নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে নাগরিক সমাজের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। তাঁরা চাইছেন, নির্বাচনকালীন যে সরকারই থাকুক না কেন, তাদের ভূমিকা যাতে নিরপেক্ষ হয়। সরকারপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমান সংবিধানের মধ্যে থেকেই সবাইকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। বাংলাদেশে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরত আনতে হবে। সর্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা বা ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউর (ইউপিআর) অংশীজনের খসড়া নিয়ে আলোচনায় এ বিষয়গুলো উঠে আসে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ড্রাফ্ট ইউপিআর স্টেকহোল্ডার্স রিপোর্ট’-এর ওপর জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। এ ছাড়া জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ের মানবাধিকারবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হুমা খান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি রঞ্জন কর্মকারসহ বিভিন্ন সংস্থার মানবাধিকারকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তামান্না হক। সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা যাতে নিরপেক্ষ হয়। যাতে সব প্রতিযোগী, অংশগ্রহণকারী ও অংশীদারের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়, সমান প্রতিযোগিতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা এমন হতে হবে, যাতে সবার সমান অধিকার থাকে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোনো পরিস্থিতিতেই আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফেরত যাবে না। এমন কোনো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে নাই যে বর্তমান সরকার বা আওয়ামী লীগকে বাধ্য করবে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরত আনায়। বর্তমান আইনের মধ্যে এসেই সবাইকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র অব্যাহতভাবে পরিচালনার জন্য যেসব বিষয় প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে মূল বিষয় হলো ভোট। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলেই প্রশ্ন তৈরি হয় মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কারণ হলো প্রধান বিরোধী দল এতে অংশগ্রহণ করতে চায় না।
২০১৪ সালের নির্বাচনের বাস্তবতা সবাই জানি। তাদের (বিএনপি) প্রধান শরিকরা ২০১৪ সালে অংশগ্রহণ করতে চায়নি। নির্বাচন নিয়ে অঙ্ক আমরা সকলেই জানি, বাংলাদেশে ২ থেকে ৫ শতাংশ ভোট পরিস্থিতি বদলে দেয়। বিশ্লেষণ করে দেখেছি, ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৯০ আসনে গড়ে ২ থেকে ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। আমরা কারও সঙ্গে জোট করলে হিসাব পাল্টে যেত।
শাহরিয়ার আলম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সরকারের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, অন্যদেরও দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব পালনে আমরা কাউকে জোর করে বাধ্য করতে পারব না। এ অবস্থার উন্নয়নের জন্য সবাইকে একত্রে এগিয়ে আসা উচিত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের কোনো প্রয়োজন নেই জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি সাংবাদিকদের দমনে করা হয়নি। তবে কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে এর কিছু অপপ্রয়োগ করেছে। প্রয়োজনে এ আইনের সংশোধন করা হবে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, মানবাধিকারের বিষয় গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। বিশেষ করে জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান না করে কাজ করা দরকার। একটি স্বাধীন কমিশন করে দেওয়া যায়। এতে কোনো বাধা থাকার কথা নয়।
উপস্থাপনায় আগের তুলনায় ইউপিআরে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরা হয়। তবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৯১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন বলে তুলে ধরা হয়। আর একই সময়ে ৫৬ জন গুমের শিকার হয়েছেন।