নিখোঁজ হওয়ার ১০ দিন পর বস্তাবন্দী ও অর্ধগলিত অবস্থায় মিলল কলেজশিক্ষার্থী ফারাবি আহমেদ ওরফে হৃদয়ের (২০) মরদেহ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে আশুলিয়ার মোজার মিল এলাকার শিববাড়ি ইস্টার্ন হাউজিং জলাশয় থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পাশেই সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব–৪।
র্যাব-৪–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রহমান বলেন, অপহরণের পর ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে না পেয়ে শ্বাস রোধ করে ফারাবিকে হত্যার পর অপহরণকারীরা মরদেহ জলাশয়ে ফেলে দিয়েছিল। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
নিহত ফারাবি আহমেদ আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ফজলুল হক মিয়ার ছেলে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। ৮ মে বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন তিনি। এ ঘটনায় ১১ মে আশুলিয়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার।
আটক তিনজন হলেন মানিকগঞ্জের সদর থানার পশ্চিম দাসপাড়া গ্রামের ময়েজ হোসেন ওরফে পরাণ (২২), বগুড়া জেলার সোনাতলা থানার মহেশপাড়া গ্রামের সুমন মিয়া ওরফে বাপ্পী (২৫) ও মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার তালখড়ির হৃদয় খান ওরফে আকাশ (২০)।
তাঁদের মধ্যে ময়েজ হোসেন আশুলিয়ার জামগড়ায় একটি ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী। বুধবার রাত ১০টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া থেকে তাঁকে আটক করে আশুলিয়া থানা–পুলিশ। সুমন মিয়া আশুলিয়ার শ্রীপুরে বসবাস করতেন, পেশায় নির্মাণশ্রমিক। তাঁকে আজ টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে এবং ঢাকার মিরপুর থেকে পোশাকশ্রমিক হৃদয় খানকে আটক করেছে র্যাব।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৮ মে বিকেলে আশুলিয়ার জামগড়ায় বাসা থেকে বের হন ফারাবি আহমেদ (২০)। দীর্ঘ সময় পরও তিনি বাসায় না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে সন্ধান পাননি। ওই দিন অজ্ঞাতপরিচয়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চান অপহরণকারীরা। অন্যথায় তাঁকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। পরে ফারাবি আহমেদের বাবা ফজলুল হক আশুলিয়া থানায় একটি জিডি করেন এবং র্যাব-৪ বরাবর একটি অভিযোগ দেন।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রহমান বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আশুলিয়া, সখীপুর ও মিরপুর থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। আজ দুপুরে আশুলিয়ার মোজার মিল এলাকার শিববাড়ি ইস্টার্ন হাউজিং জলাশয় থেকে বস্তাবন্দী ও অর্ধগলিত অবস্থায় ফারাবি আহমেদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আটক তিনজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব জানায়, ফারাবি ও ময়েজ হোসেন একই এলাকার বাসিন্দা এবং পূর্বপরিচিত হওয়ায় তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ফারাবির বাবা আর্থিকভাবে সচ্ছল। ময়েজ হোসেন, সুমন মিয়া, হৃদয় এবং অপর একজন আর্থিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে আসছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে ৮ মে আটক ব্যক্তিরা আড্ডা দেওয়ার কথা বলে ফারাবিকে কৌশলে হৃদয় খানের আশুলিয়ার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে ফারাবিকে রশি দিয়ে বেঁধে মুঠোফোনে তাঁর বাবাকে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন অপহরণকারীরা। পরে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে অপহরণকারীরা ফারাবিকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ ও মুখে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন। পরে মরদেহ বস্তায় ভরে রিকশায় করে আশুলিয়ার মোজার মিল এলাকার শিববাড়ি ইস্টার্ন হাউজিং জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক আবুল হাসান সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। নিহত ব্যক্তির পরিবার হত্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মামলা হওয়ার পর ওই মামলায় আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। এ ঘটনায় জড়িত অপর ব্যক্তিকেও আইনের আওতায় আনা হবে।