না জেনেবুঝে প্রাকৃতিক উপায়ে রূপচর্চা করছেন না তো? জেনে রাখুন সঠিক নিয়ম

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজকাল নানাজন রূপচর্চার নিজস্ব সব পদ্ধতির কথা জানান। এসব পদ্ধতিতে হাতের কাছে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে দেখা যায়। কেউ লেবু দিয়ে তৈরি করেন ফেসপ্যাক, কেউ ব্যবহার করেন দারুচিনির গুঁড়া। কেউ মুখে মাখছেন জেলাটিন তো কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে, তৈরি করছেন আদা, রসুন, পেঁয়াজ ছাড়াও আরও অনেক কিছুর ফেসপ্যাক! প্রাকৃতিক উপায়ে রূপচর্চার পদ্ধতির যেন কোনো শেষ নেই! কিন্তু এভাবে যা ইচ্ছা তা-ই বা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে রূপচর্চা করা কতটা উপকারী?

0
160
হাতের কাছে থাকা প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক, শ্যাম্পু ইত্যাদিতে কোনো প্রিজারভেটিভ থাকে না

ক্ষতির কারণ হতে পারে ‘ডু ইট ইয়োরসেলফ’ পন্থা

নিজে নিজে রূপচর্চা করতে গিয়ে ত্বকের বিশাল ক্ষতি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ঐশী (ছদ্মনাম)। টিকটকে ভিডিও দেখে লেবু দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে মেখেছিলেন তিনি। কিছুক্ষণ পরই মুখ জ্বলতে শুরু করলে ফেসপ্যাক ধুয়ে দেখেন, ত্বক পুড়ে লাল হয়ে গেছে। এরপর দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে জানা যায়, লেবু অত্যন্ত অম্লীয় হওয়ায় তা কোনোভাবেই ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করা উচিত নয়। হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, তা দিয়েই রূপচর্চা করতে গিয়ে অনেকেই এমন বিপদ টেনে আনেন। আর এতে ত্বকের যে ক্ষতি হয়, তা সারতে লেগে যায় অনেক সময়।

চর্মরোগবিশেষজ্ঞ এবং কানাডার টরন্টোর ফ্যাসেট ডার্মাটোলজির প্রতিষ্ঠাতা গীতা যাদবের মতে, ‘অনলাইনে কেউ কেউ ভালো পরামর্শ দিলেও বেশির ভাগই ভাইরাল হওয়ার জন্য যা ইচ্ছা, তা-ই করছেন।’

ত্বকের জন্য প্রিজারভেটিভ ছাড়া পণ্যই কি ভালো

অনেকে রূপচর্চার পণ্যের গায়েও ‘প্রিজারভেটিভ ফ্রি’ লেখা দেখে পণ্য কেনেন। গীতা যাদব বলেন, ‘ত্বকের জন্য প্রিজারভেটিভ সাধারণত ক্ষতিকর নয়। রূপচর্চার পণ্যে গ্লাইকল, সোডিয়াম বেনজয়েট ইত্যাদি নানান নিরাপদ প্রিজারভেটিভ ব্যবহৃত হয়। তবে যেকোনো কিছু ব্যবহার করার আগে জেনেশুনে, যাচাই করে ব্যবহার করা ভালো।’

রূপচর্চার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ব্যবহারের জন্য প্রাকৃতিক উপাদানের চেয়ে প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করাকে বেশি নিরাপদ মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘রূপচর্চার পণ্যে জীবাণুর বিস্তার রোধ করতে প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাতের কাছে থাকা প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক, শ্যাম্পু ইত্যাদিতে কোনো প্রিজারভেটিভ থাকে না। ফলে খুব দ্রুত জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে থাকে। তাই নিজের হাতে তৈরি রূপচর্চার উপাদান দীর্ঘদিন জমিয়ে রেখে ব্যবহার করা উচিত নয়।

প্রাকৃতিক উপকরণেও হতে পারে ত্বকের ক্ষতি

বৈজ্ঞানিক উপায়ে গবেষণাগারে তৈরি উপাদানগুলোকে অনেকেই অম্লীয় এবং ত্বকের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন। অনেকে বাসায় হলুদ, বেসন, লেবু, কফি, ভিনেগার ইত্যাদি নানা কিছু দিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সায়ানাইড ও আর্সেনিকও প্রাকৃতিক উপাদান। আর এসব উপাদান থাকতে পারে হাতের কাছের অনেক উপাদানে। কাজেই ত্বকে যা ইচ্ছা তা-ই ব্যবহার করলে তাতে ত্বক পুড়ে যেতে পারে।

নিজের হাতে তৈরি রূপচর্চার উপাদান দীর্ঘদিন জমিয়ে রেখে ব্যবহার করা উচিত নয়
নিজের হাতে তৈরি রূপচর্চার উপাদান দীর্ঘদিন জমিয়ে রেখে ব্যবহার করা উচিত নয়

সবার জন্য সব নয়

চুলে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে মেয়োনেজ ও নারকেল তেলের তুলনা নেই। ক্যাস্টর অয়েল চুল দ্রুত লম্বা করতে পারে। কিন্তু আপনার চুলে যদি খুশকি থাকে, তাহলে যেকোনো তেল আপনার চুলের অবস্থা আরও খারাপ করে দেবে। তাই গীতা যাদব বলেন, ‘সবার জন্য সব কাজ করবে না।’

নিরাপদভাবে ‘ডু ইট ইয়োরসেলফ’ রূপচর্চা

গীতা যাদবের সাফ কথা, ‘অতিরিক্ত অম্লীয় কোনো কিছু ত্বকে প্রয়োগ করা যাবে না।’

শসা, ব্যবহৃত টি–ব্যাগ, বরফ—এসব ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে আরাম দিতে পারে। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি অনেক ধরনের ‘ডু ইট ইয়োরসেলফ’ প্যাক আছে, যেগুলো খুব সাধারণ উপাদান দিয়ে তৈরি এবং দীর্ঘদিন জমিয়ে রাখা হয়নি, এমন প্যাক ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে সেগুলো বুঝেশুনে ব্যবহার করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও দেখে রূপচর্চা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শই দেন গীতা যাদব, ‘সময় নিয়ে, নিজের শরীরের চাহিদা বুঝে, যাচাই-বাছাই করে তারপর রূপচর্চা করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.