নাহিদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানে যা বললেন সালাহউদ্দিন

0
13
সালাহউদ্দিন আহমদ

জুলাই সনদ সই করার দিনে দাবি পূরণে বিক্ষোভে নামা ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নিয়ে বক্তব্যের জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এই বিএনপি নেতা।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দাবি পূরণ হওয়ার পরও ‘জুলাই যোদ্ধা’ নাম নিয়ে গতকাল জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বানচালের চেষ্টা হয়েছিল।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘…সুযোগটা জাতীয় সংসদের সেই সাউথ প্লাজায় কিছু কিছু আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী নিয়েছে। তারা নাম ধারণ করেছে জুলাই যোদ্ধার। জুলাই যোদ্ধা নাম দিয়ে, নামটা তারা সুযোগে ব্যবহার করেছে এবং সেই ফ্যাসিস্ট বাহিনী গতকালকের অনুষ্ঠানকে কলঙ্কিত করার জন্য, পারলে বানচাল করার জন্য চেষ্টা করেছে।’

সালাহউদ্দিন দাবি করেন, তাঁর বক্তব্যকে অপব্যাখ্যা করে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ বলার দায় তাঁর ওপর চাপানো হচ্ছে।

গতকাল জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে অনুষ্ঠানস্থল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অবস্থান নিয়েছিলেন ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে কয়েক শ ব্যক্তি। পরে পুলিশ পিটিয়ে তাঁদের বের করে দেয়। এরপর তাঁদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে।

আজ সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সালাহউদ্দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘যেসব বিশৃঙ্খলা হয়েছে, আমরা খোঁজ নিয়েছি, এটা তদন্তাধীন। দেখা গেছে, এখানে জুলাই যোদ্ধাদের নামে কিছুসংখ্যক ছাত্র নামধারী উচ্ছৃঙ্খল লোক ঢুকেছে। সেটা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী বলে মনে করি। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বিভিন্ন ফাঁকফোকরে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে। এখানে কোনো সঠিক জুলাই বা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কেউ থাকতে পারে না।’

এ কথার প্রতিক্রিয়ায় দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমদকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার এবং ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেখানে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘তিনি ভুলবশত, হয়তো তাঁর কাছে তথ্য না থাকার কারণে তিনি এ রকম বলেছেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন দেশে ছিলেন না, যেহেতু তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দেশে ছিলেন না, রাজপথে ছিলেন না, সেহেতু হয়তো তিনি জানেন না যে কে রাজপথে ছিল, কারা লড়াই করেছিল, কারা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল?’

এরপর বিকালে বিএনপির সমর্থক প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রকৌশলীদের ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রসঙ্গটি তোলেন সালাহউদ্দিন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বর্তমানে অপতত্ত্ব ছড়ানোর, একটা অপব্যাখ্যা ছড়ানোর একটা বিশাল টেন্ডেন্সি দেখি অনেকের মধ্যে। আজকে একটা দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে আমাকে কোনো একটা বিষয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। আমি এখানেই এই সুযোগটা নিয়ে এটা একটু বলে দিই।’

সালাউদ্দিন বলেন, ‘গতকালকে সংগঠিত জাতীয় সংসদের বিশৃঙ্খলা যেগুলো হয়েছে, সেটার সাথে জড়িয়ে আমি বুঝলাম না জুলাই যোদ্ধারা কেন নিজেরা সেই বিশৃঙ্খলার দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে চাচ্ছে। আমি স্পষ্টতই বলেছি, সকালে আমার একটা অনুষ্ঠানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিতে গেলে বলেছি, আমি বিশ্বাস করি জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন এবং কোনো ব্যক্তি এ রকম বিশৃঙ্খলার সাথে জড়িত ছিল না, থাকতে পারে না।’

‘জুলাই যোদ্ধা’দের একটি সংগঠন থেকে গতকাল সকালে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তার ভিত্তিতে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার পাঁচ নম্বর দফায় পরিবর্তন আনা হয়।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘তাঁরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, তাঁরা মনে করেছিলেন, অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য গণহত্যা চালিয়েছে, ছাত্রজনতা কাতারে কাতারে শহীদ হয়েছে, কিন্তু সেই গণ–অভ্যুত্থান চলাকালে সেই ফ্যাসিস্ট শক্তি বা তাদের দোসরদের কয়েকজন জনগণের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। তাঁরা মনে করেছেন, সেইখানে তাঁদের কোনো অভিযুক্ত করা হবে কি না। আমি বলেছি, যারা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, যারা গণ–অভ্যুত্থানের নিরস্ত্র ছাত্রজনতাকে হানাদার বাহিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের গণহত্যা করেছে, গণ–অভ্যুত্থানের যুদ্ধের ময়দানে তাদের বিচার জনগণ করেছে। সুতরাং তাঁদের আর বিচার হবে না। তাঁদের আশ্বস্ত করেছি এবং সেই দফাটা যাতে সংশোধন করে যে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে, সেটা বলা হয়েছে। যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের বীর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁদের যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, চিকিৎসা, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বিধান করা হয় এবং মাসিক ভাতাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা হয়, সেই বিধান লেখার জন্য আমি নিজে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রফেসর আলী রীয়াজ সাহেবের সাথে কথা বলে সেটা আমরা সংশোধন করেছি। এখানে তাঁদের সন্তুষ্টি হওয়ার কথা। সন্তুষ্ট হয়ে তাঁরা বিদায় নিয়েছেন।’

এরপরও বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমি বলেছি তাদের কথা, যে বাংলাদেশের পক্ষের কোনো শক্তি, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের কোনো শক্তি, কোনো সংগঠন, কোনো ব্যক্তি এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে না। এবং এটাও বলেছি যে যাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার প্রেক্ষিতে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ হয়নি বা যেতে পারেননি, তাঁদের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে, কমিশন ঘোষণা করেছে, যেকোনো সময় তাঁরা সেটা স্বাক্ষর করতে পারবেন। হয়তো তাঁদের সেই দাবিদাওয়াগুলো কালকের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে অবশ্যই হবে।’

এনসিপির নাম না নিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘কিন্তু বিভিন্নভাবে ইনিয়ে–বিনিয়ে আজকে যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতা পরোক্ষভাবে ভোগ করছেন, তাঁরা চায় না কোনো নির্বাচন হোক। এর মধ্যে আরও দুই একটি রাজনৈতিক শক্তি আছে, তারাও বিভিন্নভাবে পরোক্ষভাবে বেনিফিশিয়ারি এই বর্তমান সরকারের। সে জন্য তারাও চায় যে বিএনপি যেন ক্ষমতায় না আসে। এবং অনেকে মনে করে যে বিলম্বিত হলে হয়তো তারা ক্ষমতায় আসবে।’

এনসিপি নেতাদের রাজনৈতিক পরিপক্বতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যাঁরা গণ–অভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকেন এবং তাঁরা একটা রাজনৈতিক দল করেছেন, হয়তো বিভিন্ন কারণে এখনো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা হয়নি বলে বিভিন্ন রকমের কথা বলে থাকেন। আমি তাঁদের উৎসাহিত করি যে রাজনীতিতে আরও বেশি অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য, শিক্ষা নেওয়ার জন্য। কারণ, আমরা মনে করি, আমাদের এই প্রজন্মকে এগিয়ে দিতে হবে। ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য তাঁরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাঁরাই আগামী দিনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেবেন। অনেক বেশি আশা করি তাঁদেরকে নিয়ে।’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আপনি যদি ভালো খাবার সামনে পান, অবশ্যই সেটা রেখে আপনি পচা বাসি খাবার খেতে যাবেন না। এটা নীতির ক্ষেত্রেও আমাদের প্রচলন করতে হবে। আমরা যেন মানুষের সামনে ভালো রাজনীতির উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি। ভালো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উদাহরণ যেন আমরা সৃষ্টি করতে পারি। চর্চা করি এবং অব্যাহত রাখি।’

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের প্রধান উপদেষ্টা প্রকৌশলী এ এন এইচ আখতার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম তুহিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.