নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৪৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ শুক্রবার ভোর পর্যন্ত জেলার সাত থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে আজ সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে ঢাকাগামী পরিবহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকায় ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে বাধা এবং হয়রানি করতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. সেলিম, সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি ইউনুস রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ বন্দরে রাতে অভিযান চালিয়ে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. সেলিমসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। অনেক নেতা-কর্মীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
আজ সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার সাইনবোর্ড এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে ফতুল্লা মডেল থানা-পুলিশের একটি দলকে যানবাহনে তল্লাশি চালাতে দেখা যায়। ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আজিজের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি দল সেখানে তল্লাশি চালাচ্ছে। ঢাকাগামী যাত্রীবাহী গাড়ি, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি ও যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সাইনবোর্ড এলাকায় কথা হয় মৌমিতা পরিবহনের যাত্রী কাউসার আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুলিশ তাঁদের ব্যাগে তল্লাশি চালিয়েছে। তিনি কোথায় যাবেন এবং নানা বিষয়ে জানতে চেয়েছে। অন্য যাত্রীদেরও পুলিশ জেরা করছে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো সড়কের মুন্সীখোলা এলাকায় চেকপোস্ট, রাজধানীর ডেমরার প্রবেশমুখ সুলতানা কামাল সেতু ও পূর্বাচল ৩০০ ফুট চেকপোস্টে এবং নগরের চাষাঢ়ায় চেকপোস্টে যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের করা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ।
সাইনবোর্ড এলাকার চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা পুলিশের এসআই আবদুল আজিজ বলেন, কেউ যাতে মাদকদ্রব্য, অবৈধ অস্ত্র, জঙ্গি তৎপরতা এবং নাশকতা করতে অবৈধ কিছু বহন করতে না পারেন, সে জন্য মহাসড়কে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সন্দেহভাজন যাত্রীদের ব্যাগও তল্লাশি করা হচ্ছে। তবে আজ সকাল থেকে তাঁদের অভিযানে অবৈধ কিছু উদ্ধার হয়নি।
বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ডিবি পুলিশ ও পুলিশ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে দিনে ও রাতে অভিযান চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ। তিনি বলেন, নেতা-কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে। তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও অনেক নেতা-কর্মী সতর্ক থাকায় তাঁদের ধরতে পারেনি পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ জেলার ৭ থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৪৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা। তিনি বলেন, যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। চেকপোস্টে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নাশকতা যাতে না হয়, এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে চেকপোস্টে অবস্থান নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে।