কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদী থেকে আবারও একটি মাছ ধরার ট্রলারসহ বাংলাদেশি ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা। বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে টেকনাফে ফেরার পথে আজ শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব-দক্ষিণে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা–সংলগ্ন নাইক্ষ্যংদিয়ায় এই অপহরণের ঘটনা ঘটে।
শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট ট্রলার মালিক সভাপতি গফুর আলম বলেন, ট্রলারটির মালিক শাহপরীর দ্বীপের সুলতান আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ওসমান। ট্রলারের নাম এফবি ওসমান।
ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেরা হলেন লাল মিয়ার ছেলে মো. আলী আহমদ (৩৯), মোহাম্মদ রশিদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন (৩৪), মৃত আবদুল করিমের ছেলে ফজল করিম (৫২), আবদুল মজিদের ছেলে কেফায়েত উল্লাহ (৪০), শামসুল আলমের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৩), মৃত নুর বশরের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৪০), মোস্তাক আহমদের ছেলে মো. রাসেল (২৩), আব্দুর রহমানের ছেলে মো. সোয়াইব (২২), নুরুল ইসলামের ছেলে আরিফ উল্লাহ (৩৫), ফরিদ আলমের ছেলে মোহাম্মদ মোস্তাক (৩৫), নুর আহমদের ছেলে নুরুল আমিন (৪৫) এবং মোহাম্মদ আমিনের ছেলে মো. আরফান (২৩। তাঁদের সবার বাড়ি শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন গ্রামে বলে জানা গেছে।
ট্রলার মালিক সুলতান আহমেদ বলেন, তাঁর ট্রলারে ১২ জেলে সাগরে মাছ ধরতে যান। এ সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা শাহপরীর দ্বীপ ঘাটের দিকে রওনা দিলে আরাকান আর্মির সদস্যরা স্পিডবোটে এসে অস্ত্রের মুখে ট্রলারটিকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।
জানতে চাইলে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন, তবে পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শাহপরীর দ্বীপ কোস্টগার্ড ও স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে শুনেছি এবং সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’
এর আগে দুই দফায় ধরে নিয়ে যাওয়া ৭ জেলে এখনো আরাকান আর্মির হাতে জিন্মি রয়েছেন। তাঁদের এখনো ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। যার মধ্যে ১২ আগস্ট সকাল নয়টার দিকে বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকা থেকে নৌকাসহ ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
৫ আগস্ট সকালে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া–সংলগ্ন নাফ নদীর জলসীমানা থেকে বেহুন্দি জাল, নৌকাসহ টেকনাফ পৌরসভার দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার দুই জেলেকে আরাকান আর্মির সদস্যরা অপহরণ করে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ২২৩ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি ট্রলার-নৌকা ফেরত আনা হয়েছে।