আগামী জাতীয় নির্বাচন একটা চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে দলীয় নেতাকর্মীকে সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নানা ধরনের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের কারণে আগামী নির্বাচন একটা চ্যালেঞ্জ।
সোমবার গণভবনে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবন যখন একটু উন্নত হয়, তখনই এ দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার দেশের বিরুদ্ধে সব জায়গায় বদনাম করে বেড়ায়। আর কিছু লোক আছে বিদেশি অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়। যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করেনি, একাত্তরে গণহত্যা, লুটপাট ও নারী ধর্ষণ-নির্যাতন করেছে তারা এবং তাদের বংশধররা সারাক্ষণই দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেই যাচ্ছে। যারা স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশকে সমর্থন করেনি, তাদের সঙ্গেই এদের সব আত্মীয়তা। এটাই হচ্ছে এ দেশের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্য।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচনে কারচুপি করা বিএনপির অভ্যাস। ভোট চুরি আর গণতন্ত্র হরণ করাই তাদের রেকর্ড। তাদের মুখেই এখন আবার গণতন্ত্রের কথা শুনি। যারা মিলিটারি ডিকটেটরের হাতে তৈরি দল, তাদের কাছে গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়, ভোটের কথা শুনতে হয়। চুরি করাই যাদের অভ্যাস, সেই চোরদের কাছে দেশের জনগণ কী শুনবে, কী দেখবে! ২০০১ সালের নির্বাচনেও তো কম কারচুপি হয়নি। ১৯৯৬ সালে এই খালেদা জিয়াকেই দেশের মানুষ ভোট চুরির অপরাধে বিতাড়িত করেছে। আবার ২০০৬ সালে নির্বাচনেও তিনি ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার বানিয়ে ভোট চুরি করতে গেছেন। তখনও জনগণের আন্দোলনেই তাদের বিদায় নিতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী। সংগঠন যেন আরও মজবুত থাকে– সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধসহ মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর গৌরবোজ্জ্বল ত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, মুক্তিযুদ্ধ করে যুদ্ধাহত হয়ে বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজ, দিনের পর দিন কারাবরণ ও অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করা– সবক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও আওয়ামী লাগীই মানুষের পাশে থাকে। অতীতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা এবং স্বাধীনতার ইতিহাস, ‘জয় বাংলা’স্লোগান ও বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের ইতিহাস মুছে ফেলা-এমন অনেক অপকর্মই করা হয়েছে। এরপরও সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারেনি। আসলে সত্য এক সময় না এক সময় উদ্ভাসিত হবেই। সত্য কেউ মুছে ফেলতে পারে না। ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। ‘জয় বাংলা’স্লোগান আবারও ফিরে এসেছে।
টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বাইরে গেলে সবাই বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ে জানতে চায়, ‘আপনার ম্যাজিকটা কী?’ আমি বলি, ‘ম্যাজিক কিছু নেই এখানে। আমার শক্তিশালী সংগঠন আছে। আর আমাদের সংগঠনের শক্তিশালী নীতিমালা আছে। আমাদের একটা লক্ষ্য ও পরিকল্পনাও আছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও জনগণকে নিয়ে উন্নয়নের কাজ করি বলেই আমরা সাফল্য আনতে পেরেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বাংলাদেশকে বদলে দিতে পেরেছি। আজ ভিক্ষুকের জাতি বলে কেউ আর আমাদের অবহেলা করতে পারবে না। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের তৈরি হতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে।
‘বিদ্যুতের কারণে কষ্ট হচ্ছে, ব্যবস্থা নিচ্ছি’
এর আগে গণভবনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতারা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের কারণে জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে বের করে এনেছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতাদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার ঘটনায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। জোরপূর্বক গুম, হত্যা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিও চালু করেছিল বিএনপি। এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দন ফকির ও নবনির্বাচিত সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুন নূর দুলালসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করা কর্তব্য’
একই দিন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গণভবন প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণকালে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষায় বৃক্ষরোপণ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ মেলা-২০২৩, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং বৃক্ষমেলা-২০২৩ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অংশ হিসেবে গণভবন প্রাঙ্গণে তিনটি গাছের চারা রোপণ করেন শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাপী মন্দা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশে প্রতিটি স্থানে ফলমূল, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের জন্য গাছ লাগাতে এবং প্রতিটি এলাকাকে উৎপাদনের আওতায় আনতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এবং পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।