দোচালা টিনের রান্না ঘরের সামনে তিন সারিতে চলছিল তিনটি শ্রেণির পাঠদান। ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছিলেন দুইজন শিক্ষক। কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমের অস্বস্তি তো আছেই, এর ওপর একসঙ্গে তিন শ্রেণির পাঠদান চলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ কারও কথা ঠিকভাবে শুনতে পারছিল না। বুধবার ( ১৩ নভেম্বর) দুপুরে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নে পদ্মা সেতু অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে ৫২ নং পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেল।
গত ৫ অক্টোবর সকালে একই ইউনিয়নের নদীর ওপারে আহাম্মেদ মাঝি কান্দি এলাকায় অবস্থিত স্কুল ভবনটি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকেই পদ্মা সেতু অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান।
বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই এখন শ্রেণিকক্ষ ব্যতিত বাইরে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। বৃষ্টি বা রোদ হলে স্থানীয় একটি মাদরাসার রান্না ঘরের ঝাপের নিচে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আশ্রয় নেয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে স্থাপিত হয় বিদ্যালয়টি । স্থাপিতর পর থেকে টিনের ছাউনি দেওয়া পাকা মেঝের ঘরেই চলছিল পাঠদানের কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের একটি ভবনে ছিল পাঁচটি কক্ষ। পাঁচ কক্ষের ভবনটি গত ৫ অক্টোবর নদীগর্ভে বিলীন হয়।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশাদুল রায়হানা ও চতুর্থ শ্রেণির সামিয়া আক্তার বলে, আমাদের স্কুল ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাই নদী পাড় হয়ে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে। রোদ ও বৃষ্টি হলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তাই আমাদের একটি বিদ্যালয়ের ভবন দরকার।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মজিবর ও ফাহিমা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন নদীতে বিলীন হওয়ার পর আমরা অভিভাবকেরা চিন্তায় আছি। আহাম্মদ মাঝিকান্দি এলাকার আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা নদী পাড় হয়ে ওই বিদ্যালয়ে পড়ছে। বিদ্যালয়ের দপ্তরী রিপন শেখ বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় দাড়িয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পানি দিতে হয়। বিদ্যালয়ের যাবতীয় কাজ করতে হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, খোলা আকাশের নিচে অত্যন্ত কষ্ট করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছি। শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। তাই বিদ্যালয়ের ভবনটি যেন দ্রুত করা হয় এই দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম মিয়া বলেন, নদী ভাঙনের কবলে পরে বিদ্যালয়ের ভবনটি ধসে পড়ে। এরপর থেকে বাধ্য হয়ে নদী পাড় হয়ে পদ্মা সেতু অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে খোলা আকাশের নিচেই পাঠদান করতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২৩ জন। তবে ভবন বিলীন হওয়ায় পর থেকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত। উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মিহাজুর রহমান অবশ্য শুনিয়েছেন আশার বাণী। তিনি জানিয়েছেন, অস্থায়ীভাবে একটি টিনশেড ভবনে ক্লাস করানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এরজন্য বরাদ্দ চেয়ে কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বিদ্যালয়ের ভবনটি করা যাবে।