কাজ শুরু করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে শপথের পর এরই মধ্যে হয়েছে দফতর বণ্টন। আগামী রোববার (১১ আগস্ট) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দফতরে কাজ শুরু করবেন উপদেষ্টারা।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে পুলিশ ও জনপ্রশাসনে নানা অস্থিরতা। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত থানায় পুলিশ ছিল না। কোথাও কোথাও পাড়া-মহল্লায় ডাকাতির আতঙ্ক, আবার কোথাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগও রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন সরকারের সামনে রয়েছে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা ও জনমনে শান্তি ফেরানো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য সবচেয়ে জরুরি। পাশাপাশি অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আর বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তবর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
এ বিষয়ে সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষের মনে শান্তি ফেরানো। যাতে মানুষ রাতে নির্ভয়ে ঘুমাতে পারে, চলাচল ও নিজের কাজ করতে পারে। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। কোনো সম্প্রদায়ের যেন আর ক্ষতি না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেছেন, আর যেন কোনো বিশৃঙ্খল ঘটনা না ঘটে, বিশেষ করে যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে তারা কিন্তু আস্থাহীনতায় রয়েছে। ফলে আস্থা ফেরানোটা খুব জরুরি। এটিকেই প্রথম গুরুত্ব দিতে হবে বলে মত এই বিশ্লেষকের।
সেই সাথে প্রশাসনিক সংস্কার, পুলিশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনের মতো চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই। দ্রব্যমূল্য সহনীয় করার সাথে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে হবে এই সরকারকে।
আবু আলম শহীদ খান বললেন, যেভাবে সরকারব্যবস্থা চলে আসছিল সেটির পরিবর্তন দরকার। এমন একটি ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে, যাতে নির্বাচিত কিংবা অন্যভাবে তৈরি কোনো সরকার ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারে। সেজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারে সময় দরকার। আমি মনে করি, এই সরকারের অন্তত এক হাজার দিন ক্ষমতায় থেকে এই বিষয়টি করা দরকার।
অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, সরকারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার। পাশাপাশি সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। এগুলো করতে না পারলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে।
সব ছাপিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন যেন কোনোভাবেই হোঁচট না খায়, সেদিকে নজর রাখার তাগিদ দেন দুই বিশ্লেষক।
অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ঘিরেই কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতি সক্রিয়। সেজন্য তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া এবং তাদের যেন ক্ষতি না হয় সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যথায় বিশ্বে দেশের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
আবু আলম শহীদ খান বলেছেন, ছাত্রজনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন দেশ গড়ার সুযোগ এসেছে। যে সুযোগ আমাদের আশেপাশের দেশও পায়নি। এই সুযোগে রাষ্ট্রযন্ত্রকে মানবিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে।