নতুন ভাইরাস এইচএমপিভি সম্পর্কে যা জানতে হবে

0
4
করোনা মহামারির মধ্যে সতর্কতা হিসেবে চীনে অনেকে মাস্ক পরতে দেখা যায়, ফাইল ছবি: রয়টার্স

চীনের হাসপাতালগুলো মাস্ক পরা মানুষের ভিড়। এমন কিছু চিত্র বিগত কয়েক সপ্তাহে ঘুরেফির দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ থেকে একটি শঙ্কাও জেগে উঠেছে—বিশ্বে কি আবার একটি মহামারি দেখা দিতে যাচ্ছে।

চীনে যে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে, তা স্বীকার করেছে বেইজিং। এই ভাইরাসটিকে বলা হচ্ছে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি। এই ভাইরাসে শিশুরাই বিশেষ করে আক্রান্ত হচ্ছে।

তবে এইচএমপিভি কিন্তু কোভিড–১৯–এর মতো কোনো ভাইরাস নয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এই ভাইরাস দশকের পর দশক ধরে আমাদের মধ্যে রয়েছে আর বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই প্রায় সব শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তবে কোনো কোনো শিশু এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য এই ভাইরাস গুরুতর হতে পারে।’

এইচএমপিভি কী, কীভাবে ছড়ায়

এইচএমপিভি প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে। দুই বা তার বেশি মানুষের মধ্যে সরাসরি সংযোগের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়া সংক্রমিত কোথায় স্পর্শ করলে, তা থেকেও ভাইরাসটি ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।

এইচএমপিভির কারণে শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশে মাঝারি ধরনের সংক্রমণ হয়। বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণকে ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ থেকে আলাদা করা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে সর্দি–কাশি ও জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা যায়।

সিঙ্গাপুরের সংক্রামক রোগের চিকিৎসক সু লি ইয়াং বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে দুই বছরের কম বয়সসহ ছোট শিশুরা। এ ছাড়া বৃদ্ধসহ যাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাঁদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ঝুঁকিতে রয়েছে ক্যানসারের আক্রান্ত রোগীরাও।

সু লি ইয়াং বলেন, আক্রান্ত হলে দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে ‘ছোট তবে উল্লেখযোগ্য’ অংশ গুরুতর শারীরিক সমস্যার মুখে পড়তে পারেন। তাঁদের ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে, ঘ্রাণ চলে যেতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া ‘ক্রুপ’ কাশি হতে পারে। এমন উপসর্গ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগতে পারে। তবে মৃত্যুর ঝুঁকি খুবই কম।

চীনের কেন এইচএমপিভি আক্রান্ত বাড়ছে

শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সংক্রমণের মতো এইচএমপিভি সবচেয়ে সক্রিয় থাকে শীত ও বসন্তকালে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেন, এই মৌসুমে আক্রান্ত বেশি হওয়ার কারণ ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভাইরাসগুলো ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে। আর শীতের সময় মানুষ ঘরের মধ্যে বেশি সময় থাকে। ঘরের বদ্ধ পরিবেশ এই ভাইরাস ছড়ানোয় সহায়ক।

উত্তর চীনেও এইচএমপিভি সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে ঠান্ডা আবহাওয়া। সেখানে আগামী মার্চ পর্যন্ত এমন আবহাওয়া থাকতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির মহামারি বিশেষজ্ঞ জ্যাকলিন স্টিফেনস বলেন, শুধু চীন নয়, উত্তর গোলার্ধের বিভিন্ন দেশেও এইচএমপিভির প্রকোপ বাড়ছে। এটা উদ্বেগের। তবে এ প্রকোপ হয়তো শীতকালে এই ভাইরাস সাধারণ বৃদ্ধির জন্য হচ্ছে।

আর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই দেশ দুটিতেও গত অক্টোবর থেকে এইচএমপিভির সংক্রম বাড়ছে।

এইচএমপিভি কতটা উদ্বেগের

চিকিৎসক সু লি ইয়াংয়ের মতে, সারা বিশ্বজুড়ে দশকের পর দশক ধরে আমাদের মধ্যে এইচএমপিভি রয়েছে। এর অর্থ হলো বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের সংস্পশে এসেছে এই ভাইরাস। তাই কিছুটা হলেও মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

যু্ক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাঞ্জলিয়ার চিকিৎসাবিদ্যার অধ্যাপক পল হান্টার বলেন, ‘বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে প্রায় সব শিশু একবার হলেও এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হয়। আমাদের জীবনের কয়েকবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই আমি মনে করি না, বর্তমানে (এই ভাইরাসের কারণে) মারাত্মক কোনো বৈশ্বিক ইস্যু সৃষ্টির ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।’

এইচএমপিভির সংক্রমণ এড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন সু লি ইয়াং। তিনি বলেছেন সংক্রমণ এড়াতে জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরতে হবে, শ্বাসতন্ত্রের বড় কোনো জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকলে জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে, হাত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিতে হবে।

বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.