বগুড়ায় নতুন করে শিল্প জেগে উঠছে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা যেমন গড়ে উঠেছে, তেমনি নতুন উদ্যোক্তারা শিল্প খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে শিল্পকারখানা স্থাপনে নানামুখী সংকট আছে। কৃষি, শিল্প ও স্থানীয় অর্থনীতির গতি চাঙা রাখতে আসছে বাজেটে উত্তরাঞ্চলের জন্য আলাদা বরাদ্দ প্রয়োজন।
এই শহরে ১৯৫৮ সালে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন করা হয়। ৩৩ দশমিক ১৭ একর আয়তনের এ শিল্পনগরীতে বর্তমানে ২৩০টি প্লটে ৯৪টি শিল্পকারখানা আছে। শিল্পোদ্যোক্তরা নতুন কারখানা স্থাপনে আরও প্লট চান, কিন্তু ১৯৮৪ সালের পর থেকে নতুন প্লট বরাদ্দ বন্ধ।
বগুড়ায় টাইলস, সিরামিক, প্লাস্টিক, গ্লাস, পেপার মিলস ছাড়াও কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিচ্ছিন্নভাবে নানা স্থানে নতুন কারখানা স্থাপিত হচ্ছে। উত্তরের শিল্প বিকাশে বগুড়ায় বড় পরিসরে দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী প্রয়োজন। বগুড়ায় প্রচুর কৃষিপণ্য ও সবজি উৎপাদিত হয়। এখানকার সবজি বিদেশে রপ্তানি হয়। কিন্তু সবজি বা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। পরিকল্পিত শিল্পায়ন সম্ভব হলে আরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আগামী বাজেটে বগুড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে আলাদা বরাদ্দ দেওয়া দরকার।
বগুড়া থেকে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাইস ব্র্যান অয়েল, পাটের সুতা, ডিজিটাল স্কেল, জালিটুপি, পানি তোলার পাম্প, ভুট্টা, হস্তশিল্পসহ নানা পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানে বিভিন্ন ধরনের শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী। কিন্তু সংকট রয়েছে যোগাযোগব্যবস্থায়। ঢাকা থেকে বগুড়া গাড়িতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লাগে। বগুড়া বিমানবন্দর চালু হলে শুধু বগুড়া নয়, পুরো উত্তরের অর্থনীতি লাভবান হবে।
বগুড়া বিমানবন্দর চালু করতে রানওয়ে সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণের দরকার হবে। নতুন বাজেটে বগুড়া বিমানবন্দর চালুর জন্য আলাদা বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। বিমানবন্দর চালু হলে আধা ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বগুড়ায় আসতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা।
দেশের কৃষি-অর্থনীতির প্রাণ উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও কৃষক। এই অঞ্চলে কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও সবজি সারা দেশের চাহিদা মিটায়। তবে আমি মনে করি, উত্তরাঞ্চলে কৃষি খাতে এবং কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিদেশে কৃষিপণ্য রপ্তানিসহ বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দের প্রয়োজন।
ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসার জন্য উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান বন্দর হিলি। এই স্থলবন্দরে মালামাল খালাসের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ‘পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেড’। ৩৮ বছর আগে স্থাপিত স্থলবন্দরটি ২০০৫ সালে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ভারত-বাংলাদেশ পণ্য আমদানি–রপ্তানি বাড়লেও এর আধুনিকায়ন হয়নি। বন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে আগামী বাজেটে আলাদা বরাদ্দ দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
পরিমল প্রসাদ রাজ: সাধারণ সম্পাদক, রাজাবাজার আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতি ও সদস্য, বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি