আমরা বুড়া-বুড়ি কখন যে মরে যাই তা কি বলতে পারি। তাই ছেলের বউ দেখব বলে পাঁচ মাস আগে তাকে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু অভাবের সংসারে অনুষ্ঠান করতে পারিনি। তাই এখনও পোলা বউরে বাড়িতে নাইয়র (ওঠানো) আনা হয় নাই। ছেলের দোকান মালিক বলেছিলেন, রমজানের ঈদের পরে শান্তর (ছেলে) বেতন বাড়াবে। আশা ছিল, কোরবানির ঈদের পর গ্রামের মুরব্বিদের নিয়ে লাল শাড়ি পরাইয়া বউ আনব। কিন্তু তা আর হলো না। নতুন বউ আইলো স্বামীরে দাফন করতে।
কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন গুলিস্তানে বিস্ফোরণে নিহত রবিন হোসেন শান্তর বাবা সোহরাব সরদার। রবিন হোসেন শান্তকে (২৩) বুধবার রাতে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার পূর্ব নাগেরপাড়া গ্রামে দাফন করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শান্তর বাবা সোহরাব সরদার বলেন, ‘একটা মাত্র ছেলে ছিল আমার। অনেক কষ্টে ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করিয়েছিলাম। দুই বছর আগে আমার ব্রেইন স্ট্রোক হয়। পরে সে পড়াশোনা ছেড়ে রাজধানীর সিদ্দিক বাজারে একটি সিরামিকের দোকানে কাজ শুরু করে। তার সাত হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে আমাদের সংসার চলছিল। ওর টাকায় আমাদের ওষুধ কিনতে হতো। এখন কে আমাকে ওষুধ কিনে দেবে? কে আমাদের মুখে খাবার দেবে?’
রবিন হোসেন শান্তর মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা
রবিন হোসেন শান্তর মা তাসলিমা (৪৫) বলেন, ‘আমি এখন ছেলের বউকে কী করব?’
বরিন হোসেন শান্তর স্ত্রী জিয়াসমিন (১৮) বলেন, ‘আমি স্বামীর ঘর করার আগেই বিধবা হইলাম। আমি এখন কী করব? আমার কী হইব? আমার শ্বশুর বৃদ্ধ মানুষ, তিনি নিজেই এখন খেতে পাবেন না, আমাকে খাওয়াবেন কোথা থেকে?’
সোহরাব সরদারের প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সোহরাবের কোনো জমি নেই। জমানো টাকা দিয়ে ৫ শতক জমি কিনেছিলেন। সেখানে বাড়ি করবেন। কিন্তু সেই জমিতে ছেলেকে দাফন করতে হলো।
রবিন হোসেন শান্ত নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের একটি সিরামিকের দোকানে চাকরি করতেন। গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ধসে পড়া ভবন থেকে প্রথমে দোকান মালিক মমিন উদ্দিন সুমনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তার আধাঘণ্টা পর কর্মচারী রবিন হোসেন শান্তর মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। আত্মীয় শাহাদাত হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শান্তর মরদেহ শনাক্ত করেন।