২০১২ সালে যখন কেটি লেডেকির বয়স ১৫ বছর, তখন তাঁকে নিয়ে এতটা উৎসাহের কমতি ছিল না। তরুণ এক সাঁতারু সেবার প্রথম অলিম্পিক খেলার সুযোগ পান। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও চীনের নামকরা সব সাঁতারুর ভিড়ে কেমন কী করবেন, সেটা নিয়েই চলে তুমুল আলোচনা। আর শুরুতেই যে বাজিমাত। লন্ডনের পুলে ৮০০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে স্পেনের গার্সিয়া ও গ্রেট ব্রিটেনের রেবেকাকে পেছনে ফেলে এই নারী সাঁতারু জিতে নেন নিজের প্রথম স্বর্ণপদক। ভাবা যায়! ক্যারিয়ারের প্রথম অলিম্পিক, প্রথম ইভেন্টেই সবাইকে এভাবে চমকে দেবেন লেডেকি। এর পর কেবলই এগিয়ে যাওয়া। পর পর আরও দুটি আসরের ফ্রি-স্টাইলেরর সব ইভেন্টেই দেখান দাপট। এবার প্যারিসে নামার আগেই তাঁর নামের পাশে লেখা হয় সাত স্বর্ণের গল্প। তাতে বেশ কয়েকটি রেকর্ডও গড়া হয়ে যায়। এবার ১৫০০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে নামার আগেই তাঁকে নিয়ে ছিল জল্পনা। বয়সটা ২৭-এর ঘরে, এখন কি আর এত লম্বা সময় সাঁতরে পার করতে পারবেন?– এমন শঙ্কা যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন লেডেকি। রেকর্ড অষ্টম স্বর্ণও জিতে নিলেন এই আমেরিকান।
বুধবার রাতটা ছিল লিঁও মারশাঁর। প্যারিসের লা ডিফেন্স অ্যারেনায় তাঁকে নিয়ে রীতিমতো হইচই। দু-দুটি স্বর্ণ জিতে এই ফরাসি তরুণ জায়গা করে নেন দর্শকদের হৃদয়ে। আর সেই রাতেই সাঁতারের পুলে ইতিহাস লেখেন লেডেকি। প্রথম নারী সাঁতারু হিসেবে চারটি ভিন্ন অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের কীর্তি গড়লেন তিনি। সেই সঙ্গে অলিম্পিকে নারী সাঁতারু হিসেবে আটটি স্বর্ণ জিতে ছুঁয়েছেন স্বদেশি জেনি থম্পসনের রেকর্ড। যদিও এবার তাঁর শুরুটা হয়েছিল ব্রোঞ্জ দিয়ে। ৪০০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে পারেননি নিজের সেরাটা দিতে। যাক সেই আক্ষেপ যেন ১৫০০ মিটার দূর করেছেন লেডেকি। সব মিলিয়ে অলিম্পিক ক্যারিয়ারের ১২তম পদক জিতলেন। তাতে স্বদেশি ডারা টোরেস, নাতালি কফলিন ও জেনি থম্পসনের সঙ্গে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ ১২টি পদক জয়ের রেকর্ড গড়েন ২৭ বছর বয়সী লেডেকি। এমন প্রাপ্তিতে আনন্দিত লেডেকি জানিয়ে রাখলেন ইতিহাস গড়াটা তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। তাঁর দৃষ্টি কেবলই স্বর্ণ জেতা, ‘আমি ইতিহাস গড়া নিয়ে খুব একটা ভাবি না। কিন্তু আমি ওই সব নাম সম্পর্কে জানি, যাদের পাশে বসেছি। আমি সাঁতার শুরুর পর থেকেই তাদের চিনি। তাই তাদের পাশে বসতে পারাটা সম্মানের।’
এদিন ১৫০০ মিটারের ফ্রি-স্টাইলে প্রথম হতে ১৫ মিনিট ৩০.০২ সেকেন্ড সময় নেন লেডেকি, যা নতুন অলিম্পিক রেকর্ড। ভেঙেছেন নিজেরই গড়া আগের রেকর্ড। ফ্রান্সের আনাস্তাসিয়া কিরপিচিনিকোভা রৌপ্য ও জার্মানির ইসাবেল গোস ব্রোঞ্জ জিতেছেন। ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের পুলে নেমে সবাইকে অবাক করে দেওয়া লেডেকি ২০১৬ সালের রিও গেমসে চারটি ও টোকিও গেমসে দুটি স্বর্ণ জিতেছিলেন।