লোডশেডিং পরিস্থিতির আরও অবনতি

0
92
গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও বেড়েছে লোডশেডিং

প্রচণ্ড গরমের মধ্যে চাহিদা বাড়তে থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো উন্নতি হয়নি। এতে লোডশেডিং পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। দিনের কোনো কোনো ঘণ্টায় তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন। লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতে পারে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বলছে, গত চার দিনের মতো শনিবারও রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছে। এ সময় প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং ছিল তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি। আর গতকাল রোববার দিনের বেলায় সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছে তিন হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। আগের দিন শনিবার এটি ছিল দুই হাজার মেগাওয়াটের মতো।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেলের জোগান করতে না পারায় লোডশেডিং হচ্ছে। তিনি গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনের জন্য তৈরি আছে। দুই মাস আগে থেকে চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু জ্বালানি আনার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়, ঋণপত্র খোলার বিষয় থাকে; সব সমন্বয় করতে হয়। সমন্বয় কোথাও বাধাগ্রস্ত হলেই সমস্যা হয়। এবারও তা-ই হয়েছে।

তবে গত বছরের জুলাইয়ের মতো সূচি করে পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের চিন্তা আপাতত নেই বলে জানিয়েছেন নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, তাপপ্রবাহ চলছে, তাই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। লোডশেডিং পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে গেছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে। জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।

শিগগিরই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তে পারে—এমন কোনো আভাস দিতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি); বরং উৎপাদন আরও কমতে পারে। কয়লার মজুত শেষ হয়ে আসায় আজ সোমবার থেকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হতে পারে। পটুয়াখালীর ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ পায় পিডিবি। গত ২৫ মে থেকে পায়রার সরবরাহ কমতে থাকে।

রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। এই দুই সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েক দিন ধরে বিদ্যুতের চাহিদা টানা বাড়ছে। বেশি ঘাটতি হচ্ছে দিনের বেলায়। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়তি চাহিদা সামাল দিতে পারছেন না তাঁরা। গতকালও দিনের বেলায় বেশির ভাগ এলাকায় অন্তত তিনবার করে লোডশেডিং হয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে ডেসকো। আর ডিপিডিসি করেছে ৩২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত।

তবে রাজধানীর চেয়ে পরিস্থিতি বেশি খারাপ ঢাকার বাইরে। ঢাকার আশপাশের কিছু জেলা, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও রাজশাহী অঞ্চলের জেলা শহরগুলোর গ্রাম এলাকায় কোথাও কোথাও ৬ থেকে ৭ বার করে লোডশেডিং করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, বরিশালের গ্রামগুলোতে দুই থেকে তিনবার করে লোডশেডিং হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ এই সংস্থা মূলত গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। গত শনিবার সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭৬৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে এ সংস্থা। গতকাল দিনের বেলাতেই সর্বোচ্চ আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে আরইবি।

ডিজেলের বাড়তি চাহিদা

লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন ভবনে জেনারেটরের জন্য ডিজেলের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। পেট্রলপাম্প মালিক সমিতি বলছে, পাঁচ তারকা মানের একটি হোটেল আগে সপ্তাহে ৫০০ লিটার ডিজেলও নিত না। গত এক সপ্তাহে প্রায় ১০ হাজার লিটার ডিজেল নিয়েছে এমন হোটেল। এ ছাড়া যেসব ফুয়েল স্টেশন থেকে দিনে গড়ে দেড় হাজার লিটার ডিজেল বিক্রি হয়, তারা কয়েক দিন ধরে দিনে বিক্রি করছে ৭ থেকে ৮ হাজার লিটার। এতে মজুত শেষ হয়ে আসায় গতকাল সকালে বিভিন্ন ফুয়েল স্টেশনে সংকট দেখা যায়। বিকেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

পেট্রলপাম্প মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, ডিজেলের চাহিদা বেড়ে গেছে। তাঁর নিজের পাম্পে বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১ হাজার লিটার ডিজেল বিক্রি হয়েছে। দিনে বিক্রি হওয়ার কথা দেড় হাজার লিটার। নতুন করে ডিজেল আনা যায়নি। শুক্র-শনিবার জ্বালানি তেলের ডিপো বন্ধ থাকে। তাই ঢাকার প্রায় ৬০ শতাংশ পাম্পে সংকট দেখা দিয়েছিল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.