ধানমন্ডিতে মারধরের শিকার সেই নারীকে জুলাই হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখাল পুলিশ

0
3
আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে মারধরের শিকার হওয়া সালমা ইসলামকে গত বছরের জুলাই হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছিলেন এক নারী। এক তরুণীর লাঠি দিয়ে মধ্যবয়সী ওই নারীকে পেটানোর ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। মারধরের শিকার ওই নারীকে আজ শুক্রবার গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময়ের একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। যে মামলার আসামির তালিকায় তাঁর নাম ছিল না।

ধানমন্ডি থানা–পুলিশ আজ বিকেলে সালমা ইসলাম নামের এই নারীকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সালমা ইসলামের আইনজীবী আবুল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন তাঁর মক্কেলকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। অপর দিকে তাঁরা জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আইনজীবীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৪২ বছর বয়সী সালমা ইসলাম আজিমপুরে বসবাস করেন। তিনি একজন গৃহিণী। গতকাল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি।

সালমা ইসলামকে কীভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গতকাল জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ার পর ওনাকে মারধর করা হয়। সেখান থেকে কয়েকজন তাঁকে আমাদের হাতে সোপর্দ করে।’

সালমা ইসলামকে গত বছরের ১৯ জুলাই সরকারবিরোধী আন্দোলন চলার মধ্যে ধানমন্ডিতে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় করা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ।

গতকাল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনে ওই নারীকে পেটানোর ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে
গতকাল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনে ওই নারীকে পেটানোর ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

গত বছরের ১ ডিসেম্বর হওয়া ওই মামলার ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে দেওয়া আবেদনে বলেছেন, এ মামলার বাদী ইউরোপিয়ান ইউনির্ভাসিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের একজন ছাত্র। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলা অবস্থায় শুরু থেকে বাদী আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ১৯ জুলাই রাত আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে বাদী ও আরও অনেকে ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনে মিছিল করছিলেন। এ সময় কতিপয় আসামিদের নির্দেশে অন্য আসামিরা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ–সহযোগী ও ১৪–দলীয় জোটের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, কাটা রাইফেল, পিস্তল, দেশি রামদা, চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, রড ও বাঁশের লাঠি নিয়ে সুসজ্জিত হয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের তাঁদের ন্যায্য দাবি থেকে উৎখাত করার লক্ষ্যে অনবরত গুলিবর্ষণ করতে থাকে। একটি গুলি বাদীর পিঠে লেগে পেট দিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নেন।

মামলা করার সময় আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। সে সময় মামলার কোথাও সালমা ইসলামের নাম ছিল না। এ মামলা হওয়ার পর এর তদন্তভার গ্রহণ করেন উল্লেখ করে সালমা ইসলামকে নিয়ে আদালতে দেওয়া আবেদনে এসআই আনোয়ার লিখেছেন, ‘অত্র মামলাটির তদন্তকালে তদন্তে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণে অত্র মামলার ঘটনার সহিত উপরিউক্ত গ্রেপ্তারকৃত আসামি জড়িত মর্মে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়।’

তদন্ত কর্মকর্তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন সালমা ইসলামের আইনজীবী আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘উনি (সালমা ইসলাম) আবেগের বশে গতকাল দুপুরে ধানমন্ডি ৩২ এলাকায় “জয় বাংলা” স্লোগান দেন। সেখানে ওনার ওপর মব সৃষ্টি করে মারধর করা হয়। ভুক্তভোগী হওয়ার পরও ওনাকে আজ আদালতে আনা হয়েছে। জুলাইয়ের হত্যাচেষ্টা মামলা দেওয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অন্যায় হয়েছে। যে অপরাধ উনি করেননি, সে মামলায় ওনাকে আসামি করা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।’

সালমা ইসলামকে কেন এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো, সে প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন স্যারদের নির্দেশে ওনাকে এ মামলায় গ্রেপ্তর দেখানো হয়েছে। এ মামলায় ওনার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে কয়েকজন সাক্ষ্য দিয়েছে। তাদের সাক্ষ্যের আলোকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’

যাঁরা সালমা ইসলামকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন, তাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন কি না, সে প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘তাঁরা ছাড়াও অন্য সাক্ষীরা বলেছেন।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.