ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করে তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। আর ধর্ষণের মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার করতে হবে। অংশীজনদের সঙ্গে কিছু পরামর্শ করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
আজ রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। ধর্ষণের মামলায় তদন্ত ও বিচার করার সময় কমিয়ে অর্ধেক করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মূলত এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ধর্ষণ বা নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছিল। আজকে সভা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কিছু পরামর্শ করতে হবে। এরপর চূড়ান্ত করা হবে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে এ আইনগত পরিবর্তন আনার জন্য চেষ্টা করা হবে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ঘটনার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ৩০ দিনের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করতে না পারলে তাঁকে পরিবর্তন করে আরেকজনকে দেওয়া হতো। তিনিও না পারলে আরেকজনকে দেওয়া হতো। এভাবে অনেকবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হতো। এতে মামলার বিচার করতে দেরি হতো। এখন যে সংশোধনী আনা হবে, তাতে বলা হবে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে যাঁকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তাঁকেই তদন্ত কাজ শেষ করতে হবে এবং তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই। তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে তদন্তের সময়ও অর্ধেক কমিয়ে ১৫ দিন করে দেওয়া হচ্ছে।
বিচারকার্যের সময়সীমাও অর্ধেক কমানো হচ্ছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। প্রস্তাবিত সংশোধনীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্ষণের মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার করতে হবে। যদি এই ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ না–ও হয়, সেই অজুহাতে কাউকে জামিন দেওয়া যাবে না। এখন আছে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার না হলে জামিন দেওয়া যেত। এ ছাড়া ধর্ষণের মামলায় বিচারের ক্ষেত্রে যদি কোনো রকমের গাফিলতি থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুর্নিদিষ্ট বিধান আইনে সংযোজন করা হবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ সনদ লাগত, কিন্তু সারা দেশে এ ব্যবস্থা নেই। তাই অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে সংশোধনী আনা হবে। সেই সংশোধনী হবে উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিচারক যদি মনে করেন শুধু চিকিৎসা সনদের ভিত্তিতে এ মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ পরিচালনা সম্ভব, তাহলে তিনি সে রকম ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত ও বিচারে যাতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না হয়, সে ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট যত সরকারি দপ্তর আছে, তারা সর্বোচ্চ সজাগ থাকবে।