যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটের আদলে ভারতে আছে দালাল স্ট্রিট, মুম্বাই শহরের যে সড়কে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ অবস্থিত। সংবাদে বলা হয়েছে, দালাল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সামনেই ভারতের বাজেট পেশ হবে, সেই সঙ্গে আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠক—এ দুই ঘটনার দিকে এখন তাকিয়ে আছেন তাঁরা। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আস্থা যে কমেছে, তার প্রমাণ হলো, ভারতের স্টক মার্কেটের অস্থিরতার সূচক হিসেবে খ্যাত ভিআইএক্সের মান বেড়েছে ১৮ শতাংশ।
আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলোর মধ্যে আদানি পোর্ট, আদানি গ্রিন ও আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারদর কমেছে ২০ শতাংশ, আর আম্বুজা সিমেন্টের দর কমেছে ২৫ শতাংশ। আদানি পাওয়ার, আদানি উইলমার ও এনডিটিভির শেয়ারদর সর্বনিম্ন সীমায় নেমে আসে। এ ছাড়া গতকাল যে আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিও বাজারে এসেছে, তার মূল্যও ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।
সবচেয়ে বেশি দর কমেছে ব্যাংকের শেয়ারের। ভারতের শেয়ারবাজারের আরেক সূচক নিফটির মান কমেছে ১ হাজার ৩০০ পয়েন্ট। বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে ৭ শতাংশের মতো। অথচ কিছুদিন আগেও নিফটির অবস্থা ভালোই ছিল। ব্যাংকের শেয়ারের দরপতনের কারণ হলো দেশটির বেশ কিছু ব্যাংক, যেমন এসবিআই, ব্যাংক অব বারোদা, পিএনবি ও আইসিআইসিআই ব্যাংক থেকে আদানি গোষ্ঠীর মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার কারণে ব্যাংক খাত নিয়েই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ আদানি গোষ্ঠী এসব ঋণ পরিশোধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে।
তবে ভারতের ব্রোকারেজ হাউস সিএলএসএ অ্যান্ড জেফরিস বলেছে, ভারতের উল্লিখিত ব্যাংকগুলো থেকে আদানি গোষ্ঠীর নেওয়া ঋণের পরিমাণ বেশি নয়। ফলে তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। তাদের হিসাব অনুসারে, ভারতের ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ আদানি গোষ্ঠীর। সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ এ ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা আদানি গোষ্ঠীর আছে।
এদিকে আদানির জালিয়াতির খবর ছাড়াও আরও কিছু ঘটনাকে দরপতনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইকোনমিক টাইমস। সেগুলোর মধ্যে আছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের ইউনিয়ন বাজেট পেশ, ভারতের সরকারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানির তেলের মূল্যবৃদ্ধি।
কী আছে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দশক ধরে আদানি গোষ্ঠী তার কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছে। বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী ও গৌতম আদানির ১৩ হাজার কোটি ডলার সম্পদের ১০ হাজার কোটি ডলারই অর্জিত হয়েছে গত ৩ বছরে স্টক জালিয়াতির মাধ্যমে, অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই ৩ বছরে তাঁর সম্পদের গড় বৃদ্ধি ৮১৯ শতাংশ।
একই সঙ্গে হিনডেনবার্গ হিসাবে জালিয়াতির অভিযোগও এনেছে। তারা বলেছে, মরিশাস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো যেসব দেশে আয়কর ছাড়ের সুবিধা আছে, সে রকম কিছু দেশে আদানি পরিবারের মালিকানাধীন ভুয়া কোম্পানি আছে। তারা বলেছে, সেগুলোর মাধ্যমে বেআইনি লেনদেন, কর ফাঁকি ও আইন ভেঙে নথিভুক্ত সংস্থা থেকে অন্যখানে অর্থ সরিয়েছে তারা।