তুরস্কের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গড়াল রানঅফ বা দ্বিতীয় দফা ভোটে। সারাদেশের সব ভোট গণনা শেষে তুরস্কের নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিল সোমবার জানায়, কোনো প্রার্থীই সরাসরি প্রেসিডেন্ট পদে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পান। ফলে আগামী ২৮ মে দ্বিতীয় দফার ভোট হবে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্য। সেদিনই একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেবেন তুর্কিরা।
কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আহমেত ইয়েনার বলেন, নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮৮.৯২ শতাংশ। আগামী শুক্রবার আনুষ্ঠানিক চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে। সব ভোট গণনা শেষে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে ৫ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন। জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) নেতা এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯.৫০ শতাংশ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতা কামাল কিলিচদারোগলু পেয়েছেন ৪৪.৮৯ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় দফায় দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অগ্রগামী প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় দফায় লড়বেন এরদোয়ান।
ইলেকশন কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী, একই দিন অনুষ্ঠিত সংসদের ৬০০ আসনের মধ্যে এরদোয়ানের একে পার্টির নেতৃত্বাধীন পিপলস অ্যালায়েন্স জয়ী হয়েছে ৩২২ আসনে। এর মধ্যে শুধু একে পার্টি এককভাবে পেয়েছে ২৬৭টি। সংসদ নির্বাচনে দলটি পেয়েছে মোট ভোটের ৩৫.৫৮ শতাংশ। তবে আগের বারের চেয়ে একে পার্টির সংসদে আসন সংখ্যা কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি পেয়েছে ১৬৯ আসন এবং মোট ভোটের ২৫.৩৩ শতাংশ। এদিকে, প্রেসিডেন্ট পদে ফল এখনও ঝুলে থাকলেও এরদোয়ানের সমর্থকদের বিজয় উদযাপন করতে দেখা গেছে রাজধানী আঙ্কারাসহ দেশব্যাপী। টানা ২০ বছর ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ান দলের প্রধান কার্যালয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীর উদ্দেশে জয়ের ব্যাপারে বলেন, আরও ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবেন, এতে তিনি নিশ্চিত। চূড়ান্ত ফল না হলেও তাঁরা অনেক এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগলুও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ২০১৬ সালে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তিনি তাঁর ক্ষমতার পরিধি আরও বাড়ান। ফলে এরদোয়ানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে কয়েক মাস ধরেই তুরস্কের ভিন্ন বিরোধী দল একজোট হয়ে লড়ছে। ফলে প্রেসিডেন্ট পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে।
এই নির্বাচন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে পশ্চিমা দেশগুলো। কারণ কিলিচদারোগলু তুর্কি গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি তাঁর ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এরদোয়ানের পতন ঘটানোর ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে তাঁর ইসলামপন্থি সরকার। সোমবার কিলিচদারোগলু আঙ্কারায় দলীয় প্রধান কার্যালয়ে বলেন, ভোট দ্বিতীয় রাউন্ডে গড়ালে তিনি জিতবেন।
রিপাবলিকান পিপলস পার্টির নেতা হিসেবে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে অংশ নিলেও তিনি সবকটিতেই হেরেছেন। কিন্তু এবারের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। কারণ, তিনি প্রেসিডেন্টের অত্যধিক ক্ষমতা বাতিল করবেন বলে একটি বার্তা দিয়েছেন নির্বাচনের আগে। এর প্রভাব পড়েছে ভোটের বাক্সে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া ছাড়াও সম্প্রতি ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ধীর উদ্ধার তৎপরতার জন্য এরদোয়ান সরকারকে দায়ী করেছিলেন অনেকে। এসবের পরও ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে ভোট কমেনি এরদোয়ানের।