দ্বিতীয় ওয়ানডে: দারুণ জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ

0
23
জয়ের পর শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যানের সঙ্গে মাঠ ছাড়ছে বাংলাদেশ দলএএফপি

কলম্বোয় সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৬ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতায় ফিরল মেহেদী হাসান মিরাজের দল।

বাংলাদেশ: ৪৫.৫ ওভারে ২৪৮

শ্রীলঙ্কা: ৪৮.৫ ওভারে ২৩২

ফল: বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী।

মোস্তাফিজুর রহমানের বলটা উইকেটে পড়ে একটু থেমে এল। জানিত লিয়ানাগে ফ্লিক করতে গিয়ে ঠিকভাবে ব্যাটে লাগাতে পারলেন না। ফিরতি ক্যাচ উঠে গেল মোস্তাফিজের হাতেই।

এতক্ষণ সম্ভাব্য জয়ের উল্লাসে ভাসতে থাকা রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে হতাশার ধ্বনি। হঠাৎ করেই নেমে এল পিনপতন নীরবতা। এটাই ওয়ানডে ক্রিকেটের রোমাঞ্চ। শেষ হতে হতেও শেষের আগে হয় না শেষ।

সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেই শেষটা হলো চরম রোমাঞ্চকর। এই বাংলাদেশ জিতে যাচ্ছে তো ওই শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনা জেগে উঠছে। স্বাগতিকদের জন্য সেই সম্ভাবনা শেষ উইকেট পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন ৯৯ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর নেমে ৮৫ বলে ৭৮ রান করা লিয়ানাগে। এরপর বলতে গেলে তিনি একাই টেনে নেন শ্রীলঙ্কার ইনিংস।

তবু শেষ হাসি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের। ৭ বল বাকি থাকতে শ্রীলঙ্কাকে ২৩২ রানে অলআউট করে ১৬ রানের জয়ে সিরিজে এখন ১–১ সমতা। ৮ জুলাই পাল্লেকেলেতে শেষ ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ দল আজ ক্যান্ডি যাবে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে।

বাংলাদেশের ২৪৮ রানের জবাব দিতে নেমে ১৭০ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কা। তখনো ইনিংসের ১১.৩ ওভার বাকি থাকলেও সেখান থেকে শ্রীলঙ্কার হারটাই ছিল সম্ভাব্য ফলাফল। কিন্তু লিয়ানাগে যেন একটু অন্যভাবেই ভাবলেন। নবম উইকেটে দুষ্মন্ত চামিরার সঙ্গে গড়লেন ৫৮ রানের জুটি, যাতে চামিরার ভূমিকা ছিল মূলত লিয়ানাগেকে সংগত দেওয়া।

শেষ দিকে ভালো বোলিংয়ে জিতেছে বাংলাদেশ
শেষ দিকে ভালো বোলিংয়ে জিতেছে বাংলাদেশ, এএফপি

কিন্তু শেষটা পারেননি লিয়ানাগে। শ্রীলঙ্কার ইনিংসের নবম ওভারে বোলিংয়ে এসে কুশল মেন্ডিসের কাছে চার বাউন্ডারি খেয়ে ১৭ রান দেওয়া মোস্তাফিজের এ ম্যাচে একটিই অবদান— লিয়ানাগেকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ফিরিয়ে আনা। ৪৯তম ওভারে চামিরাকে বোল্ড করে সে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন আরেক পেসার তানজিম হাসান। তার আগের বলেই অবশ্য নিজের বলে আসিতা ফার্নান্দোর ক্যাচ ফেলেছেন তানজিম। সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন পরের বলে চামিরার উইকেট উপড়ানো জয়ের উল্লাসে ভাসিয়ে।

টসে জিতে আগে ব্যাট করার সুযোগে শ্রীলঙ্কার সামনে ২৪৯ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রেমাদাসায় এ রকম লক্ষ্য পরে ব্যাট করা দলকে বরাবরই জটিল পরিস্থিতিতে ফেলে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আগে ব্যাট করা দলই জেতে।

সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও সেটাই দেখা গেছে। শ্রীলঙ্কা ২৪৪ করেও জিতেছিল ৭৭ রানে। আর তাতে গত এক বছরের মধ্যে প্রেমাদাসায় টানা পাঁচ ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাট করা দল ম্যাচ জিতেছিল এবং প্রতিটি ম্যাচেই জয়ী দলের নাম ছিল শ্রীলঙ্কা। কাল তার একটির ব্যত্যয় ঘটল। টসে জিতে আগে ব্যাট করা দলই জিতেছে, তবে দলটি এবার শ্রীলঙ্কা নয়; বাংলাদেশ।

৫ উইকেট নেন তানভীর
৫ উইকেট নেন তানভীর, এএফপি

২৪৮ রানের জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই হোঁচট খেয়ে খেয়ে এগিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে পাতুম নিশাঙ্কাকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন পেসার তানজিম হাসান। কুশল মেন্ডিসের ২০ বলে ঝোড়ো ফিফটির মধ্যেই দশম ওভারে দলের ৭৫ রানে আরেক ওপেনার নিশান মাদুস্কাকে ফেরান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। তানভীরের পরের ওভারে এলবিডব্লু হয়ে ফিরে যান ৩১ বলে ৫৬ রান করে ভয়ংকর হয়ে ওঠা কুশল মেন্ডিসও।

পেটের পীড়া থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রিশাদ হোসেনকে না খেলিয়ে তানভীরকে খেলানো নিয়ে প্রেসবক্সে ভাসমান প্রশ্নটাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি তানভীরই। কামিন্দু মেন্ডিসের উইকেটটিও নিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রথম ৫ উইকেটের তিনটিই তাঁর। পরে নিয়েছেন দুনিথ ভেল্লালাগে আর মহেশ থিকসানার উইকেটও। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ২ মেডেন ওভারসহ ৩৯ রানে ৫ উইকেট শ্রীলঙ্কা সফরটাকে স্মরণীয় করে তুলল তানভীরের জন্য।

অফ স্পিনে শামীম হোসেনও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। তাঁর ৯ ওভারের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে রীতিমতো স্থবির হয়ে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। একটি মেডেন ওভার করেছেন, মাত্র ২২ রানে নিয়েছেন ফর্মে থাকা শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কা গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটিও।

নিয়মিত বোলার না হয়েও শামীম হোসেনও ভালো বোলিং করেছেন
নিয়মিত বোলার না হয়েও শামীম হোসেনও ভালো বোলিং করেছেন,এএফপি

ফর্মের সঙ্গে লড়তে থাকা লিটন দাস এই ম্যাচ খেলবেন না, জানাই ছিল। ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টে’র অংশ হিসেবে চোটপ্রবণ তাসকিন আহমেদকে বিশ্রাম দিয়ে খেলানোর সিদ্ধান্তও আগে থেকে। টি–টোয়েন্টি সিরিজের তিন ম্যাচে তাকে পূর্ণশক্তিতে পেতেই এভাবে ভেবেছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

তবে তাসকিনের জায়গায় দলে আসা আরেক পেসার হাসান মাহমুদ কাঁধের চোট থেকে ফিরে ৪ ওভারের প্রথম স্পেলে ২১ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য। লিয়ানাগে যখন শ্রীলঙ্কাকে জয়ের দিকে ছোটাচ্ছিলেন তখন ৪৫তম ওভারে তাঁর ১৪ রান দিয়ে দেওয়া ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে।

আগে ব্যাট করে ২৪৮ রান প্রেমাদাসার উইকেটে কম নয়। তবে ইনিংসের ৪.১ ওভার বাকি থাকতে অলআউট হয়ে যাওয়াটা নিশ্চয়ই আক্ষেপের ছিল বাংলাদেশের জন্য। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের অনেকেই বাজে শট খেলে উইকেট দিয়ে এসেছেন। ফিফটি করা দুই ব্যাটসম্যান ওপেনার পারভেজ হোসেন ও তাওহিদ হৃদয় ব্যতিক্রম। পারভেজের ৬৯ বলে ৬৭ রানের আত্মবিশ্বাসী ইনিংসটা শেষ হয়েছে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলিতে। আউট হওয়ার আগে নাজমুল হোসেনের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৩ ও হৃদয়ের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৩৭ রানের জুটি হয়েছে তাঁর। হৃদয় রানআউট হয়েছেন ৮ নম্বরে নামা তানজিম হাসানের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝিতে। আউটের পর ব্যাট ছুড়ে ফেলে সেটা নিয়ে মাঠেই তানজিমের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন ৬৯ বলে ৫১ করা হৃদয়।

দলীয় পারফরম্যান্সে জিতেছে বাংলাদেশ
দলীয় পারফরম্যান্সে জিতেছে বাংলাদেশ, এএফপি

হৃদয়ের ইনিংসে মাত্র দুটি বাউন্ডারিই বলে দিচ্ছে, খুব বেশি ঝুঁকি নিয়ে তিনি খেলতে চাননি। সেটার একটা কারণ হতে পারে অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা। নাজমুল, মিরাজ, শামীম—প্রত্যেকেই পারতেন নিজেদের ইনিংস বড় করতে।

ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ উইকেটে মোস্তাফিজের সঙ্গে ২৪ বলে ৩০ রানের জুটি গড়েছেন তানজিম। দুই ছক্কা ও দুই চারে তাঁর ২১ বলে অপরাজিত ৩৩ শেষ দিকে রানটা বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের, ম্যাচ শেষে সেটাকেই মনে হচ্ছে জয়ের ভিত। তবে সেই ভিত প্রায় কাঁপিয়েই দিয়েছিলেন জানিথ লিয়ানাগে।

কলম্বো থেকে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.