কক্সবাজারে ন্যাড়া পাহাড়ে এক মাসে লাগানো হবে ৫১ লাখ চারা

0
114
এখানকার পাহাড়গুলো শতবর্ষী গর্জন গাছে ভরপুর ছিল।

তিন যুগ আগেও এখানকার পাহাড়গুলো শতবর্ষী গর্জন গাছে ভরপুর ছিল। সব গাছ কেটে নিয়ে গেছে বনদস্যুরা। এখন কয়েক শ একর পাহাড় ন্যাড়া অবস্থায় পড়ে আছে। কক্সবাজার শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকার পাহাড়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। বন বিভাগের উদ্যোগে এসব পাহাড়ে গাছের চারা লাগানো শুরু হয়েছে।

গত শনিবার সকাল থেকে পাহাড়গুলোতে লাগানো হচ্ছে হরীতকী, আমলকী, গয়রা, গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, বৈলাম, সিভিট, জাম, চাপাতুল, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন জাতের চারা গাছ। গতকাল রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাশের ঈদগড় ইউনিয়নের কয়েক শ একর বিরানভূমিতেও রোপণ করা হয়েছে অসংখ্য চারা। দুই দিনে গর্জনিয়া ও ঈদগড়ে ১০ থেকে ১২ একর জায়গায় লাগানো হয়েছে প্রায় এক হাজার চারা।

কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, টেকসই বন সৃজন, জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার এবং হারিয়ে যাওয়া বন ফিরিয়ে আনতে এই বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বন বিভাগের পরিত্যক্ত জায়গাতে সবুজ বনাঞ্চল গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। সবুজায়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দুই-তিন বছরের মধ্যে জেলাতে ন্যাড়া পাহাড় আর দেখা যাবে না।
আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রায় এক মাস সময়ে জেলার চকরিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার অন্তত ২০ হাজার একর বিরানভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ৫০ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ চারা রোপণ করা হবে বলে জানায় বন বিভাগ।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, বিরান ভূমিতে সবুজায়নের এই প্রকল্প পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বড় অবদান রাখবে। বুনো হাতিরা নতুন করে আশ্রয়স্থল (অভয়ারণ্য) ফিরে পাবে। বিরানভূমিতে বনায়ন করে বনকর্মীদের বসে থাকলে চলবে না, বনাঞ্চল রক্ষার্থে পাহারা বসাতে হবে, তা না হলে সৃজিত বনাঞ্চল পুনরায় উজাড় হয়ে যেতে পারে।

গত শনিবার সকালে রামুর বাকখালী রেঞ্জের জুমছড়ির নারাইম্মারছড়ার পাহাড়ে চারা রোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ডিএফও মো. আনোয়ার হোসেন সরকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাঁকখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সরওয়ার জাহান, বিট কর্মকর্তা কুদ্দুস রহমান ও ঘিলাতলী বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খান।

বাঁকখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা কুদ্দুস রহমান বলেন, জুমছড়ি ও নারাইম্মারছড়া পাহাড়ে একটা সময় শতবর্ষী গর্জন গাছে ভরপুর ছিল। বনদস্যুরা বনাঞ্চল উজাড় করায় এই রেঞ্জের প্রায় ৩৯০ হেক্টর পাহাড় বিরানভূমিতে পরিণত হয়। দীর্ঘ তিন যুগ পর এসব পাহাড়ে নতুন করে বনায়ন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এসব বিরানভূমিতে প্রায় তিন লাখ চারা রোপণ করা হবে।

বন বিভাগের ‘সুফল’ প্রকল্পের আওতায় এই বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০১৮ সালের জুলাইতে সরকারি বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে সুফল প্রকল্প শুরু হয়। বনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো, বনজ সম্পদ উজাড় রোধ ও বননির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকার সংস্থান এ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.