দেশে ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার শিশু খর্বকায়

0
126
শিশু খর্বকায়

১৪ লাখ ৩৮ হাজার শিশু কৃশকায়।

৩ লাখ ১২ হাজার শিশু অতি ওজনের।

কিছু শিশু একই সঙ্গে খর্বকায় ও অতি ওজনের।

দেশে ৫ বছরের কম বয়সী ২৬ শতাংশ শিশু খর্বকায়। অপুষ্টির শিকার এসব শিশুর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার। এদের উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। দেশে এমন শিশুর সংখ্যা কমে এলেও এখনো তা উচ্চপর্যায়ে আছে বলে একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

অপুষ্টির শিকার শিশুদের এই অনুমিত সংখ্যা ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে প্রকাশ করেছে। ২৩ মে প্রকাশিত ‘শিশু অপুষ্টির মাত্রা ও প্রবণতা’ শীর্ষক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অন্তত একটি ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি বাড়ছে। দেশে আগের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত ওজনের শিশুর সংখ্যা বাড়ছে।

প্রতিবেদনের শুরুতে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংক বলেছে, পুষ্টি প্রতিটি শিশুর অধিকার। পুষ্ট শিশু পূর্ণ সম্ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠতে ও উন্নতি করতে পারে। তারা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের অধিকারী হয়, তারা শেখা ও চর্চার ক্ষেত্রে ভালো করে, তারা দারিদ্র্য থেকে দূরে থাকে। বৈশ্বিকভাবে অপুষ্টি কমে এলেও কিছু ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

প্রতিবেদনের তথ্যগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা প্রয়োজন।

পুষ্টিবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের দেশি পরিচালক সায়কা সিরাজ

শিশু অপুষ্টির আলোচনায় প্রথমে শিশুদের উচ্চতার প্রসঙ্গ চলে আসে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। খর্বকায় শিশুদের শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। এই সমস্যা জীবনভর চলে এবং এর পরিণাম পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছায়।

বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম, এমন শিশুর সংখ্যা কমছে। ২০১২ সালে ছিল ৩৯ শতাংশ বা ৬০ লাখ ৪৬ হাজার। বর্তমানে ২৬ শতাংশ বা ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার। একে ‘উচ্চ’ হার বলছে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংক।

একই সঙ্গে দুই ধরনের অপুষ্টির শিকার শিশুদের বৈশ্বিক বা দেশভিত্তিক পরিসংখ্যান নেই।

অপুষ্টির আরেকটি সূচক কৃশতা বা ওয়াস্টিং। কিছু শিশু তাদের উচ্চতার তুলনায় কৃশ বা হালকা–পাতলা হয়। কোনো কারণে যদি দ্রুত ওজন কমে যায় বা কোনো কারণে যদি ওজন না বাড়তে থাকে, তাহলে শিশু কৃশ হয়ে পড়ে। মাঝারি থেকে মারাত্মক কৃশকায় শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। এই ধরনের শিশুর চিকিৎসা দরকার হয়। প্রতিবেদন বলছে, দেশের ৫ বছর কম বয়সী ৯ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু কৃষকায়। এদের মোট সংখ্যা ১৪ লাখ ৩৮ হাজার।

অপুষ্টির শিকার শিশুর শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতিতে ঘাটতি থাকে। এসব শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বেশি।

শিশুদের অনেকের মধ্যে অত্যধিক ওজনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যেসব শিশুর ওজন উচ্চতার তুলনায় বেশি, তারা অতি ওজনের শিশু। যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি শক্তি শিশুরা যদি খাদ্য ও পানীয় থেকে গ্রহণ করে, তাহলে সেসব শিশু অতি ওজনের হয়। দেশে বর্তমানে এই ধরনের শিশু আছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বা ৩ লাখ ১২ হাজার। ১০ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭১ হাজার। অর্থাৎ কম করে হলেও প্রতিবছর এই ধরনের শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। এসব শিশুর অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংক বলছে কোনো কোনো শিশু একসঙ্গে দুই ধরনের অপুষ্টিতে ভোগে। অর্থাৎ শিশু একই সঙ্গে খর্বকায় ও অতি ওজনের হতে পারে। আবার কোনো ক্ষেত্রে শিশু একই সঙ্গে খর্বকায় ও কৃশকায় হতে পারে। তবে একই সঙ্গে দুই ধরনের অপুষ্টির শিকার শিশুদের বৈশ্বিক বা দেশভিত্তিক পরিসংখ্যান নেই।

গত কয়েক দশকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক খাতে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে দেশের পুষ্টি পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্যে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে। ২০১১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী খর্বকায় শিশু ছিল ৪১ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৩৬ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৩১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২২ সালে তা ২৪ শতাংশ।

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো, দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার খাওয়ানো, শিশুকে বাড়ির হাঁড়ির খাবার খাওয়ানো—এসব প্রচার–প্রচারণা পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। সরকারি হাসপাতালে পুষ্টি কর্নার খোলা হয়েছে। হাসপাতালে তীব্র অপুষ্টির শিকার শিশুদের আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। সরকার কিশোর–কিশোরীদের পুষ্টির উন্নতিতেও কাজ করছে।

এই ব্যাপারে পুষ্টিবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের দেশি পরিচালক সায়কা সিরাজ বলেন, প্রতিবেদনের তথ্যগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা প্রয়োজন। অপুষ্টির দ্বিগুণ বোঝা নিরসনে বহু খাতভিত্তিক পুষ্টিব্যবস্থার সফল বাস্তবায়নের প্রয়োজন অপরিসীম। স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অন্য বিভাগগুলোর পুষ্টি সহায়ক কার্যক্রমগুলো জোরদার করতে হবে। শিশুর অপুষ্টি নিরসনে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, বিশেষ করে কৈশোরকালীন পুষ্টি ও স্বাস্থ্য কার্যক্রমগুলোতে কিশোরীদের পাশাপাশি কিশোরদের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা জরুরি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.