দেশে ১৪ হাজার নতুন রোহিঙ্গা, অপেক্ষায় আরও ৭০ হাজার

0
20
রোহিঙ্গা
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাতের কারণে গত ৮-৯ দিনে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারা কমপক্ষে ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে, যার মধ্যে মংডু এলাকা থেকে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেশি।
 
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ডে আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারে, তবে এই দফায় আরও ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।
 
৩ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন যে, নতুন করে ৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেছেন, ‘এটা কীভাবে ঠেকানো যায়, সেটা আমাদের চেষ্টা করতে হবে।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা নতুন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেব না, যদিও এটা বলাটা আমাদের জন্য কষ্টকর, কিন্তু আমাদের সাধ্যের বাইরে, আমরা তাদের আশ্রয় দিতে পারব না।’
 
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গত ৮-৯ দিনে ১৩-১৪ হাজার নতুন রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে অবস্থান নিয়েছে। মংডু সীমান্তে আরও ৬০ থেকে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষা করছে। নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কড়া নজরদারির মধ্যেও নানা কৌশলে তারা বাংলাদেশে ঢুকছে। কিছু দালাল তাদের অর্থ নিয়ে ঢুকতে সাহায্য করছে।
 
উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ইউনুস আরমান বলেছেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি রাখাইন রাজ্যের মংডুতে যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে। মংডু টাউনে থাকা সেনা ও বিজিপির দুটি ব্যারাক দখলের জন্য মরিয়া আরাকান আর্মি। গোলাগুলি ও মর্টার শেল, গ্রেনেড-বোমা ব্যবহার করা হচ্ছে, মাঝে মাঝে ড্রোন হামলাও চলছে।’
 
রোহিঙ্গাদের ৯ নাম্বার ক্যাম্পের এক নাম্বার ব্লকের হেড মাঝি মোহাম্মদ হোসেন বলেছেন, ‘প্রতিদিন নতুন রোহিঙ্গারা আসছেন। তারা নাফ নদী ও অন্যান্য সীমান্ত থেকে আসছেন। স্থানীয় কিছু লোক তাদের বাংলাদেশে প্রবেশে সহায়তা করছে। সবাই ক্যাম্পে আসছে না, ক্যাম্পের বাইরেও তারা অবস্থান করছে।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘মংডুতে চলমান তীব্র সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গারা সেখানে টিকতে পারছেন না। তারা মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও আরাকান আর্মির হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’
 
টেকনাফের সাবেক কাউন্সিলর নুরুল বাসার বলেন, ‘৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কয়েক দিন সীমান্ত দিয়ে ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। এখনও বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। দালালরা তাদের ঢুকতে সহায়তা করছে। তারা প্রথমে কক্সবাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে, পরে আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন রোহিঙ্গা প্রবেশের কারণে আমরা আতঙ্কিত। আমরা ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছি, যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে, তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
 
কক্সবাজারে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, ‘প্রতিদিন ক্যাম্পে নতুন রোহিঙ্গারা আসছে। এটা স্পষ্ট যে, সীমান্ত থেকে নতুন করে রোহিঙ্গারা ঢুকছে। তবে আমরা এখনও তাদের কোনো তালিকা তৈরি শুরু করিনি। সরকার থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি।’
 
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল হক বলেন, ‘যদি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো না যায়, তাহলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। ইতিমধ্যেই ক্যাম্পে মাদক, অস্ত্র ব্যবসা ও নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অস্তিত্ব তৈরি হয়েছে।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘এখনই এই সমস্যা সমাধানের সময়। সরকারের উচিত কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা। আমরা নতুন রোহিঙ্গা নিতে পারব না।’
 
আরেক সাবেক কূটনীতিক ও কসোভোতে সাবেক ইউএন আঞ্চলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এস এম রাশেদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে আশা করি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা ইস্যুটি শক্তভাবে তুলে ধরবেন। তার গ্রহণযোগ্যতা আছে। আশা করি, তার প্রচেষ্টায় কাজ হবে।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘এখনই সময় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করে এই সমস্যা সমাধানের। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবসনই একমাত্র সমাধান। প্রয়োজনে আমাদের আরাকান আর্মির সাথে ভিন্ন চ্যানেলে কথা বলতে হবে।’
 
‘আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাথে দৃশ্যমান শক্তি দেখাতে হবে। একটি দেশে সীমান্তের ওপার তো নন-স্টেট অ্যাক্টরদের দখলে থাকতে পারে না’ বলেন মো. শহীদুল হক। সূত্র: ডয়চে ভেলে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.