প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রিজার্ভ সম্পর্কে জনগণকে বিভ্রান্তকারী লোকদের নিন্দা করে বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত রিজার্ভ রয়েছে এবং রিজার্ভ জনসাধারণের কল্যাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার সরকার জনগণের কল্যাণে সম্ভাব্য সবকিছু করবে, কাউকে ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক যে আমাদের রিজার্ভ থেকে (দেশবাসীর কল্যাণে) খরচ করতে হবে। আমাদের কাছে এত পরিমাণ রিজার্ভ মানি আছে যে, আমরা পাঁচ মাসের জন্য খাদ্য আমদানি করতে পারি, যদিও যেকোনো দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে তিন মাসের জন্য খাদ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থাকতে হয়।’ খবর বাসসের।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
চাল, গম, ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল এবং ভ্যাকসিন আমদানিসহ জনগণের কল্যাণে রিজার্ভ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ রিজার্ভের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠছে এবং তারা চা-স্টলে ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় রিজার্ভ নিয়ে আলোচনা করছে। কোভিড-১৯, ভর্তুকি দেওয়া, কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধ করায় এই টাকা ব্যয় হয়েছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যে রিজার্ভ রেখে গিয়েছিল তা থেকে আওয়ামী লীগ ২০০৮ এ নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করে তখন সেই রিজার্ভ ছিল ৫ বিলিয়নের কিছু ওপরে। করোনাকালে যেহেতু আমদানি বন্ধ ছিল, রেমিট্যান্স সরকারিভাবে এসেছে, কোনো হুন্ডি ব্যবসা ছিল না, কোনো রকম খরচ ছিল না তাই আমাদের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। তবে, বাংলাদেশ তাদের সব ঋণ সবসময় সঠিকভাবে পরিশোধ করে এসেছে এবং এক বারের জন্যও ঋণ খেলাপি হয়নি।
সরকারের যত সমস্যা হোক এই অবস্থাটা তার সরকার ধরে রাখতে পেরেছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। দেশের কাজ বেড়েছে, তা ছাড়া ভ্যাকসিন ক্রয় এবং করোনা মোকাবিলার আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে- এগুলোর জন্য টাকা খরচ হয়েছে। পানির মতো টাকা খরচ করতে হয়েছে। তারপরে এখন আমাদের খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে তার জন্য অধিক দামে আমদানিতে অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, যতই দাম বাড়ুক সরকার ইউক্রেন-রাশিয়া, কানাডা থেকে এই যুদ্ধকালিন সময়ে গম কিনে আনছে। এজন্য ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। ভোজ্য তেল সেই ব্রাজিল থেকে শুরু করে পৃথিবীর যে দেশে পাওয়া যায় আমরা নিয়ে আসছি। মানুষের ভোগ্য পণ্য প্রাপ্তিতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার।
‘রিজার্ভ শুধু আমাদের দেশে নয় পৃথিবীর অনেক দেশের রিজার্ভ কমে গেছে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার শ্রীলংকাকে কিছু সহযোগিতা করেছে এবং আরও অনেক দেশ বাংলাদেশের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে উল্লেখ করে তিনি সেসব দেশের নাম উল্লেখ করেননি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন যেটুকু রিজার্ভ সেটা আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজন, সেটা আমাদের রাখতে হবে’।
সরকার প্রধান এর ব্যাখ্যায় বলেন, রিজার্ভ রাখা লাগে কেন না যদি কোনো দৈব দুর্বিপাক হয় সে সময় ৩ সাসের খাবার যেন আমদানি করা যায়। আর সেজন্য আমাদের খাদ্য পণ্য যাতে মোটেই আমদানি করতে না হয় তার জন্য তিনি দেশবাসী প্রত্যেককে যার যেখানে এতটুকু জমি আছে তাতে ফসল ফলিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমি ফেলে রাখবেন না। যে যা পারেন উৎপাদন করেন। নিজেরা সাশ্রয় করেন। নিজের খাদ্য নিজে জোগান দিন এবং আমরা তা করতে পারি, বাংলাদেশের মানুষ তা করতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এখন যে রিজার্ভ তাতে তিন মাস নয়, আমরা ৫ মাসের খাদ্য আমদানি করতে পারি, সে পরিমাণ রিজার্ভ আমাদের কাছে আছে।’
তবে, তারা একটা গুজব ছড়াচ্ছে ব্যাংকে টাকা নাই, ব্যাংকে টাকা পাওয়া যাবে না, আর সবাই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে ঘরে রাখছে। আসলে ঘরে টাকা রাখা মানে চোরকে সুযোগ করে দেওয়া। কাজেই চোরকে সুযোগ করে দেবেন না। ব্যাংকে টাকা রাখবে সেসব টাকার মালিক যারা তাদের ওপরই নির্ভর করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এই বিশ্ব মন্দার মাঝেও উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতিও রয়েছে তবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বাচিপের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বক্তৃতা করেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি স্বাচিপের স্থায়ী কার্যালয়ের ফলক উন্মোচন করেন।