দেশে ২২৬ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বছরে সাড়ে আট লাখ

0
151
মানুষের মৃত্যুর কারণ

বছরে সারা বিশ্বে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। আকস্মিক দুর্ঘটনায় অনেকে মারা যান বটে, তবে ৪৫০টির বেশি রোগ ও আঘাতজনিত কারণে ভুক্তভোগী হয়ে অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু ঘটে। কোন কোন রোগে কী অবস্থায় মানুষের মৃত্যু ঘটছে, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের নেতৃত্বে নেওয়া এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানা যায়।

এক দশক আগে দ্য ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের নেতৃত্বে সে সমীক্ষায় অংশ নেন বিশ্বের প্রায় ৫০০ বিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্যবিদ, রোগতত্ত্ববিশারদ, পরিসংখ্যানবিদ ও গবেষক। ১৯০টি দেশের তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে তাঁরা সমীক্ষাটি করেন। তার ভিত্তিতে ‘বৈশ্বিক রোগের ভার’ (গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজেস) শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি বিশ্বের নজর কেড়ে নেয়। এ গবেষণার সম্পূর্ণ শিরোনাম ছিল ‘দ্য গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজেস, ইনজুরিস অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টরস’ বা ‘বৈশ্বিক রোগ, আঘাত ও ঝুঁকির ভার’।

সেই সমীক্ষার ভিত্তিতে জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট ২০১২ সালে বিশ্বের সব দেশের বিভিন্ন রোগ ও আঘাতের কারণে মানুষের মৃত্যুর বিস্তারিত পরিসংখ্যান প্রথমবারের মতো প্রকাশ করে। সমীক্ষাটিতে দেখা গিয়েছিল, বাংলাদেশে বছরে আনুমানিক ৮ লাখ ৪৭ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। আর এর পেছনে আছে ২২৬টি রোগ ও আঘাতের কারণ।

মৃত্যুর পেছনে রোগের উৎস নিয়ে এটিই বিশদ তথ্যভিত্তিক সমীক্ষা।

দেশে কোন রোগে কত মৃত্যু

সমীক্ষাটিতে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ বলা হয়েছে তিনটি—সংক্রামক রোগ, অসংক্রামক রোগ এবং আঘাত ও দুর্ঘটনা।

সংক্রামক রোগগুলোর মোট ৬২টি আছে বাংলাদেশের ব্যাধিতালিকায়। ৬২টি ব্যাধিকে ৭টি বর্গে ভাগ করা হয়েছে—এইচআইভি–এইডস ও যক্ষ্মা; ডায়রিয়া, নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও অন্যান্য সাধারণ সংক্রামক ব্যাধি; অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ ও ম্যালেরিয়া; মাতৃরোগ; নবজাতকের রোগ; অপুষ্টিজনিত রোগ এবং অন্যান্য সংক্রামক; মাতৃ, নবজাতক ও অপুষ্টিজনিত রোগ। অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ ও ম্যালেরিয়ার বর্গে ইয়োলো ফিভার ছাড়া আর সব কটির প্রাদুর্ভাবই বাংলাদেশে আছে।

অসংক্রামক রোগের পাল্লা সবচেয়ে বেশি ভারী। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অসংক্রামক রোগগুলোর ১০টি বর্গ। এই বর্গগুলোতে যত রোগ আছে, তার ১৩০টিতে বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যু হয়। এসবের মধ্যে আছে ক্যানসার, হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, অস্থিসংক্রান্ত ব্যাধি, সিরোসিস ও অন্যান্য যকৃতের রোগ এবং পরিপাকতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র ও দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এসবের সঙ্গে আরও আছে মানসিক রোগ।

আঘাত ও দুর্ঘটনাও আছে বহু ধরনের। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যু, এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত। এসব ধরন আছে মোট ৩৪টি। এই ৩৪ ধরনকে ৪টি বর্গে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে সড়ক দুর্ঘটনা; অনিচ্ছাকৃত আঘাত; নিজেকে নিজে আঘাত ও আন্তর্ব্যক্তিক সহিংসতা এবং বলপ্রয়োগ; দ্বন্দ্ব ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড; মৃত্যুদণ্ড ও পুলিশি সংঘাত।

অসংক্রামক রোগের বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের একটি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) অসংক্রামক রোগ গবেষণা শাখার প্রধান আলিয়া নাহীদ। আলিয়া নাহীদ বলেন, বিশ্বের দেশগুলোর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানের নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস এখানে ব্যবহার করা হয়। সুনির্দিষ্ট কোনো সময়ের তথ্য তাঁরা অতীতের সঙ্গে তুলনা করেন। এক বা একাধিক রোগের ধরন বা প্রবণতা বিশ্লেষণ করে তার ভিত্তিতে তাঁরা প্রজেকশন বা প্রাক্কলন করেন। তাঁরা যেসব তথ্য দিচ্ছেন, তা নীতিনির্ধারকদের বেশ কাজে লাগছে।

মৃত্যুর কারণ হিসেবে নানা ধারা–উপধারার মধ্য থেকে ক্যানসারের ওপর চোখ বোলানো যাক। বাংলাদেশে প্রতিবছর কত মানুষ কত ধরনের ক্যানসারে মারা যান, তার পরিসংখ্যান সরকারের কোনো দপ্তরে নেই। এই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ৩৮ ধরনের ক্যানসারে মানুষ মারা যান।

এর মধ্যে আছে—ঠোঁট ও মুখের ক্যানসার, গলার ভেতরের (ফ্যারিংস) ক্যানসার, গলার ভেতরে ঊর্ধ্বাশের (ন্যাজোফ্যারিংস) ক্যানসার, খাদ্যনালির ক্যানসার, পাকস্থলির ক্যানসার, মলাশয় ও মলনালির ক্যানসার, যকৃতের ক্যানসার, হেপাটাইটিস বি–জনিত যকৃতের ক্যানসার, হেপাটাইসিস সি–জনিত যকৃতের ক্যানসার, মদ্যপানজনিত যকৃতের ক্যানসার, যকৃতের অন্যান্য ক্যানসার, পিত্তকোষের ক্যানসার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার, স্বরযন্ত্রের ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, ম্যালিগন্যান্ট স্কিন মেলোনোমা, নন–মেলোনোমা স্কিন ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, জরায়ুমুখ ক্যানসার, জরায়ুর ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার, মূত্রথলির গ্রন্থির ক্যানসার, অণ্ডকোষের ক্যানসার, কিডনির ক্যানসার, মূত্রথলির ক্যানসার, মস্তিস্কের ক্যানসার, গলগ্রন্থির ক্যানসার, মেসোথেলিওমা, হডকিং লিম্ফোমা, নন–হডকিং লিম্ফোমা, মাল্টিপল মাইলোমা, লিউকোমিয়া, অ্যাকিউট লিম্ফয়েড লিউকোমিয়া, ক্রনিক লিম্ফয়েড লিউকোমিয়া, অ্যাকিউট মাইলয়েড লিউকোমিয়া, ক্রনিক মাইলয়েড লিউকোমিয়া। এসব ছাড়াও কিছু ক্যানসার আছে।

রোগের এই দীর্ঘ তালিকার পাশাপাশি এসব রোগে কত মানুষ মারা যান, তারও অনুমিত সংখ্যা গবেষকেরা দিয়েছেন।

মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণ

বাংলাদেশে একসময় কলেরা বা ম্যালেরিয়ার মতো সংক্রামক রোগে মানুষের মৃত্যু হতো বেশি। বিজ্ঞানের উৎকর্ষ ও রোগ ব্যবস্থাপনার বিকাশের কারণে সংক্রামক রোগে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। বিপরীতে গড় আয়ু বৃদ্ধি, জীবনযাপনে পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কারণে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এসব রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। ২০০৯ ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণের তালিকা দিয়েছে দ্য ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের।

২০০৯ সালে মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণ ছিল স্ট্রোক, স্কেমিক হার্ট ডিজিজ, নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যক্ষ্মা, ডায়রিয়াজনিত রোগ, সিরোসিস, ডায়াবেটিস, নবজাতকের অসুখ এবং পানিতে ডোবা।

২০১৯ সালে মৃত্যুর প্রধান ১০ কারণ ছিল স্ট্রোক, স্কেমিক হার্ট ডিজিজ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ, নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়াজনিত রোগ, যক্ষ্মা, সিরোসিস, ক্যানসার ও নবজাতকের অসুখ।

সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যুর শীর্ষতম কারণ স্ট্রোক। স্ট্রোকের দুটি ধরন। একটি রক্তনালি ফেটে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ, আরেকটি মস্তিস্কের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম বলেন, ‘স্ট্রোকে বহু মৃত্যুর ঘটনা দেখছি ও শুনছি। এটি দেশের মানুষের মৃত্যুর প্রধানতম কারণ কি না, তা বলা মুশকিল। কারণ, মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করার জন্য জাতীয়ভিত্তিতে কোনো জরিপ নেই। তবে জরিপ হলে যে মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্ট্রোকের অবস্থান, তালিকার ওপরের দিকেই থাকবে, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।’

গত বছর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশের মানুষের মৃত্যুর প্রধান ১৫টি কারণের একটি তালিকা প্রকাশ করে। স্ট্রোক ছিল সেই তালিকায় শীর্ষে। অন্য কারণগুলো ছিল—হৃদ্‌রোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, সিরোসিস, অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধি, খাদ্যনালির ক্যানসার, কিডনির রোগ, আত্মহত্যা, ফুসফুসের ক্যানসার, জরায়ুমুখের ক্যানসার, ডায়রিয়াজনিত রোগ, সড়ক দুর্ঘটনা ও পতনজনিত মৃত্যু।

মৃত্যুর পেছনে

মৃত্যু ছাড়াও রোগের কারণে মানুষকে দীর্ঘ সময় অসুস্থ অবস্থায় জীবনযাপন করতে হয়। অনেকে শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যু এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বা প্রতিবন্ধিতার পেছনে কী কী স্বাস্থ্যঝুঁকি কাজ করেছে, তারও একটি তালিকা দিয়েছে দ্য ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের গবেষকেরা।

২০০৯ সালে বাংলাদেশে শীর্ষ ১০টি ঝুঁকির তালিকায় ছিল অপুষ্টি, বায়ুদূষণ, তামাক, উচ্চ রক্তচাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পয়োব্যবস্থা, রক্তে অতিমাত্রায় শর্করা, পেশাগত ঝুঁকি, স্থূলতা এবং উঁচু মাত্রার এলডিএল।

২০১৯ সালের শীর্ষ ১০টি ঝুঁকির তালিকায় ছিল অপুষ্টি, বায়ুদূষণ, উচ্চ রক্তচাপ, তামাক, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, রক্তে অতিমাত্রায় শর্করা, স্থূলতা, পেশাগত ঝুঁকি, পয়োব্যবস্থা এবং উঁচু মাত্রার এলডিএল।

অপুষ্টি দীর্ঘদিন ধরে দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ও নারীর মধ্যে অপুষ্টি এখনো অনেক বেশি। বায়ুদূষণও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে আছে, অথচ এ বিষয়ে সচেতনতা কম। অপুষ্টি ও বায়ুদূষণ ছাড়াও ১০ বছরের ব্যবধানে স্বাস্থ্যঝুঁকির যে তালিকা গবেষকেরা দিয়েছেন, তার সঙ্গে দ্বিমত করার বিশেষ অবকাশ নেই।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, ‘দেশে আগের চেয়ে পুষ্টি–পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষ নিম্নবিত্তের মানুষ কতটা পান, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অন্য যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বলা হয়েছে, আমরাও তা বলছি। এসব ঝুঁকি মাথায় রেখেই নীতিনির্ধারকদের স্বাস্থ্য বিষয়ে পরিকল্পনা নিতে হবে।’

সেবা ও চিকিৎসা পরিস্থিতি

দ্য ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের সঙ্গে যুক্ত গবেষকেরা নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় সামনে আনছেন। কোন দেশ কতটা সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ) অর্জন করেছে, ২০২০ সালের অক্টোবরে তাঁরা তা প্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও টিকাদানসহ ২০টি রোগের চিকিৎসা–পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

সেই প্রতিবেদনে দেখা যায়, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন ৫৪ শতাংশ। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির মাধ্যমে ৭৯ শতাংশ সক্ষম দম্পতি আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন ধরনের টিকা পাচ্ছে ৯২ শতাংশের বেশি শিশু। বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো করছে ডায়রিয়ার চিকিৎসায়। ৯৬ শতাংশ ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসা পায়। এর পরে আছে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা। প্রয়োজনের সময় ৯৪ শতাংশ রোগী এর চিকিৎসা পান। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি রক্তে শ্বেতকণিকার আধিক্যজনিত ক্যানসারের চিকিৎসা। এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ চিকিৎসা পান। স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের ১১ শতাংশ যথাসময়ে চিকিৎসা পান। হাঁপানির কার্যকর চিকিৎসা পান মাত্র ১৫ শতাংশ রোগী।

এই গবেষণার গুরুত্ব কোথায়

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের এই উদ্যোগের মাধ্যমে বৈশ্বিক রোগ–পরিস্থিতির একটি সার্বিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। তারা প্রায় সাড়ে ৪০০ রোগ ও আঘাতের কারণ এবং প্রায় ১০০টি স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। রোগ ও আঘাতের কারণে বিশ্বের কোন দেশে মোট কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, কোন রোগে কত প্রাণক্ষয় ঘটছে, কত মানুষকে প্রতিবন্ধিতার দুঃসহ জীবন বরণ করে নিতে হচ্ছে, রোগের কারণে মানুষের আয়ু কতটা কমে আসছে, এসবের একটি অনুমিত হিসাব পাওয়া যাচ্ছে। এই অনুমিত হিসাব পদ্ধতিগত ও বৈজ্ঞানিকভাবে কার্যকর বলে বিশ্বস্বীকৃতিও পাচ্ছে।

এই গবেষণার মাধ্যমে একটি দেশের সঙ্গে অন্য দেশের স্বাস্থ্য–পরিস্থিতি তুলনা করা সহজ হয়েছে। এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের স্বাস্থ্য–পরিস্থিতিও তুলনা করা যাচ্ছে। বয়স ও নারী–পুরুষের আলাদা আলাদা পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্য নিয়ে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে। সামষ্টিক স্বাস্থ্য–পরিস্থিতি উন্নয়নে ব্যবস্থা নিতে এসব তথ্যের ভূমিকা আছে।

নিকট অতীতেও বিশ্ব স্বাস্থ্য–পরিস্থিতির তথ্য পাওয়ার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ বা বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হতো। এখন এসবের পরিসংখ্যান দ্য ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের সমীক্ষা থেকে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। তারা নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য–পরিস্থিতির তথ্য–উপাত্ত নিরীক্ষা করে দেখছে। তাদের পরিসংখ্যান, বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ–প্রবন্ধ এবং ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং স্বাস্থ্য–কর্তৃপক্ষের কাছে ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

এই সুবৃহৎ উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা শুধু বর্তমান স্বাস্থ্যপরিস্থিতির ছবিই তুলে ধরছেন না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা স্বাস্থ্যের বৈশ্বিক গতিধারার পূর্বাভাসও দিচ্ছেন। জনস্বাস্থ্য ও রোগ নিয়ে নানা ধরনের বৈশ্বিক প্রাক্কলন প্রকাশ করছেন তাঁরা।

অসংক্রামক রোগের বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের একটি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) অসংক্রামক রোগ গবেষণা শাখার প্রধান আলিয়া নাহীদ। আলিয়া নাহীদ বলেন, বিশ্বের দেশগুলোর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানের নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস এখানে ব্যবহার করা হয়। সুনির্দিষ্ট কোনো সময়ের তথ্য তাঁরা অতীতের সঙ্গে তুলনা করেন। এক বা একাধিক রোগের ধরন বা প্রবণতা বিশ্লেষণ করে তার ভিত্তিতে তাঁরা প্রজেকশন বা প্রাক্কলন করেন। তাঁরা যেসব তথ্য দিচ্ছেন, তা নীতিনির্ধারকদের বেশ কাজে লাগছে।

শিশির মোড়ল

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.