দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় প্রায় ৪২ ডিগ্রি

0
193
চুয়াডাঙ্গা

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ জেলায় গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এদিকে ২ এপ্রিল থেকে আজ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১৩ দিন ধরে আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে আসছে চুয়াডাঙ্গায়।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, প্রতিদিনই জেলায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীব্র তাপদাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকায় তাপমাত্রা কমার কোন সম্ভাবনা নেই। শুক্রবার দুপুর ৩ টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৭ ডিগ্রি। বাতাসের আদ্রতা ১৪ শতাংশ। এর আগে দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০.৩ ডিগ্রি।

একটানা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হিট স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়রিয়া, শিশুদের নিউমোনিয়াসহ গরমজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই ৭০-৮০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া ও টাইফয়েড রোগীই বেশি।

তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গরমের প্রভাবে সবচেয়ে সংকটে আছেন পরিবারের জ্যেষ্ঠ ও শিশু সদস্যরা। বাড়ি বাড়ি গরমজনিত জ্বর-ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। সদর হাসপাতাল ও জেলার তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গরমজনিত রোগের চিকিৎসা নিতে রোগীদের ভিড় বেড়েই চলেছে।

সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. ফাতেহ আকরাম জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশিরভাগই গরমজনিত রোগে আক্রান্ত।

চুয়াডাঙ্গার রেলবাজারের ব্যবসায়ী সাহেল আহমেদ জানান, সূর্যের প্রখরতায় আর পিচ ঢালা পথের উষ্ণতায় চলাচল করা খুবই কষ্টকর হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

খেটে খাওয়া ও দিনমজুর মানুষগুলো পেটের দায়ে ভোর হওয়ার সাথে কাজের সন্ধানে বের হয়ে পড়ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর কাজ না পেয়ে অনেকে ফিরে যাচ্ছে। সড়কে মানুষের উপস্থিতি না থাকায় ইজিবাইক, রিক্সা, ভ্যান চলাচলও কমে যাচ্ছে। ভাড়া না পাওয়ায় তারা অলস সময় পার করছেন। রাস্তার ধারে ফলের দোকানসহ সব ধরনের দোকানে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে।

ইজিবাইক চালক মনির হোসেন জানান, ‘পেটের তাগিদে বের হচ্ছি। এতো, গরম পড়ছে। রাস্তা-ঘাটে মানুষ বের হচ্ছে না। তাই ভাড়াও পাচ্ছি না। এমন দিন থাকলে, খাওয়া-দাওয়া করে বেঁচে থাকায় কষ্টকর।’

চুয়াডাঙ্গা জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়াম জানায়, ‘আজ পহেলা বৈশাখ। বুঝতেই পারছি না। স্কুলে যেতে পারলাম না। বৈশাখের কোন আনন্দও পাচ্ছি না। গরমের কারণে আমার আব্বু-আম্মু আমাকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তীব্র তাপদাহের কারণে বোরো ধান, আমের গুটি ঝরে শুকিয়ে যাচ্ছে। আমগাছে পানি স্প্রে এবং বোরো ধানসহ সব ধরনের সবজি ক্ষেতে প্রতিদিনই সেচ দিতে এবং সেচের পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্রসাহা বলেন, প্রচন্ড তাপদহের কারণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক গরমে করণীয় বিষয়ে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলতি মৌসুমে মাঝারি দাবদাহ বিরাজ করছিল। ওই দিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ সেলসিয়াস। শুক্রবার রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৭ ডিগ্রি। চলতি সপ্তাহেই তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড থেকে প্রচণ্ডতর দাবদাহ দেখা দিতে পারে চুয়াডাঙ্গাতে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মাহবুবুর বলেন, ‘গরমে শিশুদের ডায়রিয়া, টাইফয়েড, শরীরে ঘাম বসে নিউমোনিয়া, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, জ্বর ও প্রস্রাবে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। এসব রোগ নিয়েই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে তারা। আমরা শিশুকে ঘরের বাইরে বের হতে দেওয়া যাবে না। টাটকা খাবার খাওয়াতে ও ফ্যানের নিচে রাখতে হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.