দেশের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বেড়ে ৯২৫ কোটি ডলারে উঠেছে

0
76
ডলার

দেশের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ৯ বিলিয়ন বা ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ প্রান্তিকে ঘাটতির পরিমাণ ৯২৫ কোটি ডলারে উঠেছে। এর আগের ২০২২–২৩ অর্থবছরের একই সময়ে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ছিল ৪০৯ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়াসহ কয়েকটি কারণে ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন, প্রবাসীরা পুঁজিবাজার বা অন্যত্র আগের চেয়ে কম বিনিয়োগ করছেন, উল্টো বিনিয়োগ ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তার বিপরীতে দেশে আয় আসা কমেছে।

দেশে আন্তর্জাতিক সম্পদের মালিকানা হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি পরিমাপ করা হয় আর্থিক হিসাবের মাধ্যমে। সাধারণত এই হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুত ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ডলার–সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় দেড় দশকের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো এ হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়।

দেশে দুই বছর ধরে চলা ডলার–সংকট এখনো কাটেনি। যে কারণে রিজার্ভের পতনও থামছে না। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী দেশে এখন রিজার্ভ রয়েছে ১৮ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৮৩৬ কোটি ডলার, আর নিট রিজার্ভ হচ্ছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।

আর্থিক হিসাবের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), পোর্টফোলিও বিনিয়োগ, অন্যান্য বিনিয়োগ ও রিজার্ভ অ্যাসেট বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অন্যান্য বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক সহায়তা, সরকারের মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, ঋণের কিস্তি পরিশোধ, দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণ, ট্রেড ক্রেডিট বা রপ্তানির বিপরীতে প্রত্যাবাসিত অর্থ এবং অন্যান্য সম্পদ ও দায়।

ডলার-সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে দেশে মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ সার্বিকভাবে আমদানি কমেছে। ব্যাংকগুলো আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিষয়ে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে। অন্যদিকে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে সার্বিকভাবে বাণিজ্যঘাটতি কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-মার্চ সময়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে ৫৭৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ঘাটতি ছিল ৩২৯ কোটি ডলার।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বিদেশি ঋণছাড় কমে যাওয়া, সরকারের বিদেশি ঋণ পরিশোধ বৃদ্ধি পাওয়া, কাঙ্ক্ষিত হারে বিনিয়োগ না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বাড়ছে। আবার যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তার বিপরীতে সব আয় সময়মতো দেশে আসছে না। রপ্তানি আয় সময়মতো দেশে না আসাকেও আর্থিক হিসাবে ঘাটতির বড় একটি কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, রপ্তানি করা পণ্যের আয় কেন সময়মতো আসছে না, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের মধ্যে যে ফারাক রয়েছে, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা শেষ হলেই কিছুটা বিভ্রান্তি দূর হবে।

বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যের হিসাব অনুযায়ী, জুলাই-মার্চ সময়ে বাণিজ্যঘাটতি ছিল ৪৭৪ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৬৩ কোটি ডলার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.