বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা রোধ করতে একটি দুষ্ট চক্র দেশে-বিদেশে সরকার এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দুষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো কাজ করছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
বুধবার সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে তিন দিনের সফরে বেলজিয়াম রয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন, আগামী ২৭ অক্টোবর (শুক্রবার) প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
একই প্রশ্নের জবাবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পদ্মা রেল লিংকসহ বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব অবকাঠামো বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার মুকুটে নতুন নতুন স্বর্ণ পালক যুক্ত করেছে। বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দেশের জনগণ বহুমুখী অর্থনৈতিক সুফল পাচ্ছে।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশ ও জনগণের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, বাংলাদেশের ইতিবাচক অগ্রযাত্রায় গতিরোধ করতে বহির্বিশ্বে ও বাংলাদেশে অপপ্রচারকারীদের একটি দুষ্টচক্র সরকার এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দুষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা কাজ করছে।
তিনি জানান, দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারগুলো মোকাবিলাসহ বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং অনলাইন মিডিয়াতে নিয়মিতভাবে তথ্যবহুল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশের এবং কনটেন্ট প্রচারের বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহ নানা রকম সভা বা আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সচেতন করে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও হীন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে প্রবাসে জনমত গঠন করা হচ্ছে।
ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, যেসব অসত্য বা বিকৃত খবর ও গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয় সেগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেমন- ফেসবুক পেজ ও টুইটারের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আসা অতিথিদের সঙ্গে আলোচনা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে মিডিয়াসহ বিশ্ববাসীকে অবহিত করছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, গুজব ও অপপ্রচাররোধে ১৫টি প্রতিবেদন, ৭২টি তথ্যবিবরণী এবং ১টি প্রেসনোট জারিসহ ৭টি ফিচার তথ্য অধিদপ্তর থেকে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করা হয়েছে।
গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে এবং আমার ওয়াশিংটন সফরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ওয়াশিংটন ডিসিতে এবং বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া নিউইয়র্কে আমার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এসব বৈঠকে দ্বি-পাক্ষিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। যা দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
বঙ্গবন্ধু টানেল ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়
সরকারি দলের এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশের অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ টানেল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর আনোয়ারা প্রান্তে আবাসন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ, কলকাখানা স্থাপন ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে আবর্তিত ব্লু ইকোনমির নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। চট্টগ্রামে ওয়ান সিটি টু মডেল টাউন-এ গড়ে উঠবে।