দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন

0
150

তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মানবাধিকার সংগঠনের সম্পাদক আইনজীবী আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ মঙ্গলবার উভয়পক্ষের শুনানি শেষে তাদের জামিন আবেন মঞ্জুর করেন।

এদিন সকালে আদিলুর-এলানের জামিন শুনানির শুরুতে ডায়াসের সামনে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমাদেরও বক্তব্য আছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, আসামিদের আইনজীবীকে আগে বলতে দিন। আপনি এখনই লাফ দিয়ে উঠছেন কেন? দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’

এ জে মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।’ এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে গুজব ও তথ্য বিকৃতির অভিযোগে সাজা হয়েছে।’ তখন আদালত উস্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘তাহলে তাদের ২ বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দণ্ড দিতে পারলেন না।’ শুনানি শেষে আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানের আপিল আবেদন গ্রহণ করে তাদের জামিন আদেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন আদালত।

পরে আইনজীবী রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছে। ফলে আপাতত তাদের কারামুক্তিতে আইনগত বাধা নেই। তবে রায়দানকারী আদালতে জামিননামা (বেইলবন্ড) জমা দিতে হবে। আমরা দ্রুতই সেটি জমা দেওয়ার চেষ্টা করব। তার আগে উচ্চ আদালতের জামিনের আদেশের কপি সংগ্রহ করব।

দশ বছর আগে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগের মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। রায়ের পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর ৫০ পৃষ্ঠার পুর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সাজাপ্রাপ্তরা কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে জামিন চান তারা।

রায়ের পর ২৫ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলান হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেন। আবেদনে সাজা থেকে খালাস ও জামিন চাওয়া হয়। অপরদিকে তাদের সাজা বাড়াতে গত ৫ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

দশ বছর আগে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ৬১ জন নিহত হওয়ার কথা দাবি করেছিল অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য সেই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ওই বছরের ১০ জুন সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে সেটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। এ মামলায় আদিলুর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.