পেনশন নিয়ে বিপাকে যুক্তরাজ্যের ২২ শতাংশ মানুষ, বেরিয়ে যাচ্ছেন অনেকে

0
104
পেনশন, প্রতীকী ছবি

জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যের অনেক মানুষ পেনশন তহবিলে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করেছেন বা কমিয়ে দিয়েছেন। এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় সামাল দিতে গিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এমন এক সময় এই তথ্য জানা গেল, যখন যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম পেনশন ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান অ্যাবারডিন পেনশন তহবিলের চাঁদা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, অবসরের পর এখনকার কর্মক্ষম মানুষের যে আয়সংকট হবে, সেটা সামাল দিতে চাঁদা দ্বিগুণ করা দরকার।

দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের মানুষের প্রকৃত মজুরি কমছে, কিন্তু বিভিন্ন পরিষেবার মাশুল বাড়ছে, এ পরিস্থিতিতে লাখ লাখ মানুষ ব্যয় কমানোর পথ খুঁজছেন বা আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অবসর–উত্তর সময়ের জন্য আর সঞ্চয় করা সম্ভব নয়।

এ জরিপটি করেছে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হারগ্রিভস ল্যান্সডাউন। এতে বলা হয়েছে, ২২ শতাংশ মানুষ হয় পেনশনের জন্য সঞ্চয় কমিয়ে দিয়েছেন বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন, পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন ১৪ শতাংশ, আর কমিয়েছেন ৮ শতাংশ মানুষ।

প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।

তুলনামূলকভাবে যাঁদের বয়স কম, তাঁদের এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সেই তুলনায় যাঁদের বয়স একটু বেশি, তাঁরা পেনশন চালিয়ে নিতে চান। ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পেনশন তহবিলে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করেছেন বা কমিয়েছেন, যেখানে ৩৫ থেকে ৫৪ বয়সীদের মধ্যে এই প্রবণতা প্রতি পাঁচজনে একজনের।

বিমা কোম্পানি স্কটিশ উইন্ডোজ বলছে, এই জরিপ থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেশের অন্তত ৩৫ শতাংশ মানুষের অবসর–উত্তর জীবনের চাহিদা বা ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর সামর্থ্য কমে যাবে। অর্থাৎ বয়স বাড়লে এই মানুষদের পক্ষে মৌলিক চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা কমে যাবে, এমন ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।

হারগ্রিভস ল্যান্সডাউনে অবসরবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হেলেন মরিস গার্ডিয়ানকে বলেন, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে মানুষের পক্ষে এসব সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষ যে প্রথমে ব্যয় মেটানোর পর পেনশন নিয়ে ভাবছে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তবে তিনি এটাও মনে করেন, মানুষ এখন পেনশন নিয়ে হিমশিম খেলেও যখন তাঁদের সামর্থ্য ফিরে আসবে, তখন পেনশন নিয়ে চিন্তা করা জরুরি; অর্থাৎ তখন তাঁদের পেনশন স্কিমে ফেরত যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

যুক্তরাজ্যে এত দিন অটো এনরোলমেন্টের ব্যবস্থা ছিল, অর্থাৎ যাঁদের সামর্থ্য আছে তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেনশন তহবিলে যুক্ত হয়ে যেতেন। এই ব্যবস্থাপনার অধীনে কর্মীদের বেতনের অন্তত ৮ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ পেনশন তহবিলে জমা হতো। এর মধ্যে ৩ শতাংশ দিতেন কর্মীরা, ৪ শতাংশ দিত প্রতিষ্ঠান আর সরকার ১ শতাংশ করছাড় দিত, এই নিয়ে মোট ৮ শতাংশ।

অ্যাবারডিনের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন বার্ড মনে করেন, এই ৮ শতাংশ এখনকার বাস্তবতায় যথেষ্ট নয়। তাঁর মতে, শোভন পেনশনের জন্য এই চাঁদার পরিমাণ দ্বিগুণ করা প্রয়োজন।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সরকারের বিভিন্ন ভর্তুকির পরিমাণ কমে আসছে। ইউরোপের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও ভালো নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে। ফলে এমন একটি অবস্থায় যুক্তরাজ্যের মানুষেরা বিপাকেই পড়েছেন। এ কারণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের জনপ্রিয়তা কমছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.