মাউন্টেন ভিউয়ের শোরলাইন অ্যাম্ফিথিয়েটারে গুগলের বার্ষিক সম্মেলন (আই/ও ২০২৩) পর্বের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাগত বক্তব্যে বারবারই উঠে আসছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ভবিষ্যতের নানা দিক।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউয়ে গুগলের চারটি রঙে সজ্জিত মঞ্চে উঠলেন গুগল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাই। বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনলাইনে যুক্ত কোটি দর্শকেরও সঙ্গে যুক্ত হলেন।
স্মার্টফোনে ‘পিক্সেল ফোল্ড’ সর্বাধুনিকতার সুস্পষ্ট জানান দিচ্ছে। ইউটিউব ও টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতে প্রথমবার অফিসিয়াল ক্ষমতায় ভাঁজযোগ্য (পিক্সেল ফোল্ড) ডিভাইস নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশ পায়। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গুগল আই/ও সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে পিক্সেল ফোল্ড প্রকাশের ঘোষণা দিলেন সুন্দর পিচাই।
স্মার্ট বিশ্বে ভাঁজ করা যায় তেমন কোনো স্মার্টফোনের সঙ্গে মানুষেরা খুব বেশি অভ্যস্ত নয়। স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোল্ড ডিভাইসের অনুরূপ ট্যাবলেট আকৃতির ডিসপ্লে উন্নয়ন করেছে। পিক্সেল ফোল্ড বন্ধ করলে বাইরের পাশে ছোট টাচস্ক্রিনের ব্যবহার দেখা যাবে। আর পেছনের অংশে আছে অ্যারে ক্যামেরা।
দামের প্রশ্নে সদুত্তর পাওয়া গেছে। পিক্সেল ফোল্ডের দাম ১ হাজার ৭০০ ডলার। পিক্সেল ফোল্ডে গুগল ‘টেন্সর জিটু’ চিপসেট যুক্ত করেছে। যা পিক্সেল সেভেন ডিভাইসেও পাওয়া যাবে। স্ক্রিনের আকৃতি ৫.৮ ইঞ্চি (বাহ্যিক) আর ভেতরের ডিসপ্লে ৭.৬ ইঞ্চি। ব্যাটারি লাইফে আছে, পূর্ণ চার্জে টানা ২৪ ঘণ্টা অবধি এক্সট্রিম ব্যাটারি সেভার মোডসহ ৭২ ঘণ্টা অবধি টানা সচল থাকার নিশ্চয়তা।
স্মার্টফোনে ফোল্ডেবল যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে তা সুন্দর পিচাইয়ের ঘোষণা থেকেই সুস্পষ্ট । যদিও নতুন ধারার স্মার্টফোনে স্যামসাং নাম লিখিয়েছে আগেই। তবে শুরুতে কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে প্রত্যাশিত স্যামসাং ফোল্ডেবল ফোনের সাফল্যেয় ভাটা পড়ে। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে গুগল। আর ভুলগুলো সংশোধন করে সবকিছু ভোক্তাবান্ধব করেই উন্মোচন করছে পিক্সেল ফোল্ড।
স্মার্টফোনে ফাইভজি গতির পুরোটা উপভোগে ফোল্ডেবল ফোন অবশ্যই অভ্যাস বদলের আভাস দিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) যাত্রাকালে ফোল্ডেবল স্মার্টফোন নতুন কি উন্মাদনা নিয়ে আসে তা দেখার অধীর অপেক্ষায় আছেন সবাই।
ভাঁজযোগ্য ফোনে ক্যামেরা সেন্সরের জন্য সঠিক ডিজাইন ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের প্রযুক্তির দুনিয়ায় টাচস্ক্রিনের পরে দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা আভাস দিচ্ছে ফোল্ডেবল স্মার্টফোন পিক্সেল।
পিক্সেল সেভেন প্রো মডেলে ৫এক্স টেলিফটো জুম আছে। গুগল উদ্ভাবিত জেড ফোল্ড-৪ মডেলের তুলনায় যা দৃষ্টিনন্দন। স্যামসাংয়ের মতোই গুগল কিছু নিফটি মোড অন্তর্ভুক্ত করেছে। যা স্মার্টফোনকে অর্ধেক অবস্থায়ও সেলফি ও ছবি তুলতে নতুন অভিজ্ঞতা দেবে।
সুপার ডিটেইল সেলফি তুলতে পেছনের ক্যামেরা এবং সামনের স্ক্রীন একইসঙ্গে ব্যবহার করা যায়। ফোল্ডেবল ফোনের কেসগুলোও যথেষ্ট নিখুঁত।
অবশেষে পিক্সেল ফোল্ডের চশমাগুলোকে রাউন্ডিং করা হয়েছে। যা প্রিমিয়াম লুক দেয়। বৈশিষ্ট্য টেনসর জিটু চিপ, ১২জিবি র্যাম, ৫১২ স্টোরেজ এবং দুপাশের স্ক্রিনে ১২০ গিগাহার্জ রিফ্রেশ রেট নিশ্চিত করে। অন্যদিকে পাওয়ার বাটনে একটি সাইড-মাউন্ট করা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর দেওয়া আছে। তারহীন (ওয়্যারলেস) চার্জিং যা আইপিএক্স৮ ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স সমর্থন করে। যা প্রকাশিত ভাঁজযোগ্য ফোনের মধ্যে বিরল ও বাস্তব দৃষ্টান্ত।
পিক্সেল ফোল্ডের ওজন ১০ আউন্স বা ২৮৩ গ্রাম। যা আসলে গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৪ (২৬৩ গ্রাম) মডেলের তুলনায় ভারী।
সুপার স্লিম ডিজাইনের কারণে যা খোলার সময় ৬ মিলিমিটার থেকে কম পুরু হয় (বা বন্ধ করার সময়ে হয় ১২.১ মিমি)। গুগল বলছে, এখন অবধি যে কোনও ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের চেয়ে টেকসই ফোল্ড। কাজের প্রয়োজনে ডিভাইসের দুটি পর্দা সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। আর একটি অংশ বন্ধ হলে গেলেও আরেকটি অংশ সচল থাকে।
ওলেড ডিসপ্লে স্মার্টফোনে আনবে নতুন দৃষ্টিশক্তি। উজ্জ্বল রঙের সঙ্গে একটি বড় ৭.৬ ইঞ্চি (২২০৮ বাই ১৮৪০ পিক্সেল) সুদৃশ্য ডিসপ্লে থাকছে। এখন হ্যাঁ, একটি ক্রিজ আছে, এবং আমি সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করতে পারি না যখন ডিভাইস নির্মাতারা তাদের ভালোর জন্য নির্বাসিত করতে পারে।
পিক্সেল ফোল্ড বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ল্যান্ডস্কেপ ঘরানা অর্থাৎ আগে যা ট্যাবলেট ডিজাইনে দেখা গিয়েছিল তা দৃশ্যত হচ্ছে। ডিজিটাল ডিভাইস বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্মার্টফোন এখন ফোল্ডেবল যুগে প্রবেশের অপেক্ষায়। যদিও এ ঘরানার ফোনে স্যামসাং আগে নাম লিখিয়েছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা ছুড়ে দিল গুগল। বাজারে এখন ফোল্ডেবল ফোনে সুস্পষ্ট প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান হবে।